মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না

খবরটি শেয়ার করুন

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছিল আজ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এ পরীক্ষা। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়। তবে, শেষ সময়ে কোনো রকম সতর্কতা না জানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের মূল ফটক বন্ধ করে এবার পরীক্ষা দিতে পারেননি প্রায় ২০ জনের মতো পরীক্ষার্থী।

তাদের অভিযোগ, পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের কোনোরকম সতর্ক না করেই ঠিক ৯টা ৩০ মিনিটে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর এক মিনিটের মধ্যেই ভেতরে প্রবেশ করতে গেটের সামনে থাকা দায়িত্বরতদের আকুতি-মিনতি করেও লাভ হয়নি। দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নেওয়ার পরও বিএসএসের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। এতেও মন গলেনি কেন্দ্রে থাকা দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা থেকে ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শাউলিনা। ১৫ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হলেও শেষ সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকতে পারেনি তিনি। শাউলিনা বলেন, আমি ৯টা ১৫ মিনিটে এই এলাকায় চলে এসেছি। ঠিক ৯টা ৩১ মিনিটে রাস্তায় গেটের সামনে ছিলাম। সর্বশেষও আমি দেখলাম ঢুকতে দিচ্ছে, তখন আমি বাচ্চাটাকে একপাশে বসিয়ে রেখে এসে দেখি গেট বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মূল গেটের দেয়াল টপকিয়ে দ্বিতীয় গেটে এসেছি, কিন্তু এখান থেকে ঢুকতে দেয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার রিকুয়েস্ট করার পরও ঢুকতে দেননি।

তিনি আরও বলেন, আমি এর আগে আরও অনেক পরীক্ষা দিয়েছি, ১৫ মিনিট আগেও শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু এই কেন্দ্রে কেন এমন করল আমরা বুঝতে পারছি না। এমনকি শেষ সময়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পরীক্ষার্থীদের কোনোরকম সতর্কতাও দেওয়া হয়নি।

শাউলিনা বলেন, এটাই হয়তো আমার শেষ বিসিএস। আমার কাছে আমার পরিবারের অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু এতো প্রস্তুতি নিয়ে এসে পরীক্ষাটাই দিতে পারলাম না। জানি না এখন আমার কী করা উচিত। এই মুখ নিয়ে আমি বাসায় যাব কী করে?

আসাদুজ্জামান নূর নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার পরিচিত আরেকজন পরীক্ষার্থী ছিল মুসলিম অ্যাকাডেমিতে। তাকে ওখানে রেখে ঠিক ৯.৩১ মিনিটে আমি গেটের সামনে এসেছি, কিন্তু তারা কোনোভাবেই আমাকে ঢুকতে দেবে না। আমি বারবার বলেছি যে, এক মিনিট তো খুব বেশি দেরি না। অনেক সময় তো ঘড়ির কাঁটাও এক মিনিট এদিক-সেদিক হতে পারে। কিন্তু আমাদের কোনো রিকুয়েস্টই রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, আমি কক্সবাজারে একটা চাকরি করি, সেখান থেকে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ১ মিনিটের জন্য আমি পরীক্ষার কেন্দ্রেই ঢুকতে পারিনি। এটাই আমার শেষ বিসিএস ছিল।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের নিয়মই ছিল ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা বারবার বলেছি, একটু সময় নিয়ে কেন্দ্রে আসবেন, ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। তারপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে না পারে, তাহলে আমাদের দৃষ্টিতে সে পরীক্ষার অযোগ্য।

এক মিনিটের জন্যও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করা যেত কি-না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন এসে বলবে এক মিনিট, আরেকজন এসে বলবে পাঁচ মিনিট, এসব শুনলে তো আমার হবে না। তারপরও আমি ওই কেন্দ্রে কথা বলে দেখছি কী করা যায়।

ট্যাগঃ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন, হাউমাউ করে কান্না

আপডেট এর সময় ০৫:২৭:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
খবরটি শেয়ার করুন

৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছিল আজ। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে এ পরীক্ষা। নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়। তবে, শেষ সময়ে কোনো রকম সতর্কতা না জানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের মূল ফটক বন্ধ করে এবার পরীক্ষা দিতে পারেননি প্রায় ২০ জনের মতো পরীক্ষার্থী।

তাদের অভিযোগ, পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের কোনোরকম সতর্ক না করেই ঠিক ৯টা ৩০ মিনিটে গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর এক মিনিটের মধ্যেই ভেতরে প্রবেশ করতে গেটের সামনে থাকা দায়িত্বরতদের আকুতি-মিনতি করেও লাভ হয়নি। দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নেওয়ার পরও বিএসএসের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন পরীক্ষার্থীরা। এতেও মন গলেনি কেন্দ্রে থাকা দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।

কুমিল্লা থেকে ঢাকায় বিসিএস পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন শাউলিনা। ১৫ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হলেও শেষ সময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকতে পারেনি তিনি। শাউলিনা বলেন, আমি ৯টা ১৫ মিনিটে এই এলাকায় চলে এসেছি। ঠিক ৯টা ৩১ মিনিটে রাস্তায় গেটের সামনে ছিলাম। সর্বশেষও আমি দেখলাম ঢুকতে দিচ্ছে, তখন আমি বাচ্চাটাকে একপাশে বসিয়ে রেখে এসে দেখি গেট বন্ধ করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, মূল গেটের দেয়াল টপকিয়ে দ্বিতীয় গেটে এসেছি, কিন্তু এখান থেকে ঢুকতে দেয়নি। ম্যাজিস্ট্রেটকে বারবার রিকুয়েস্ট করার পরও ঢুকতে দেননি।

তিনি আরও বলেন, আমি এর আগে আরও অনেক পরীক্ষা দিয়েছি, ১৫ মিনিট আগেও শিক্ষার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়। কিন্তু এই কেন্দ্রে কেন এমন করল আমরা বুঝতে পারছি না। এমনকি শেষ সময়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পরীক্ষার্থীদের কোনোরকম সতর্কতাও দেওয়া হয়নি।

শাউলিনা বলেন, এটাই হয়তো আমার শেষ বিসিএস। আমার কাছে আমার পরিবারের অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু এতো প্রস্তুতি নিয়ে এসে পরীক্ষাটাই দিতে পারলাম না। জানি না এখন আমার কী করা উচিত। এই মুখ নিয়ে আমি বাসায় যাব কী করে?

আসাদুজ্জামান নূর নামের আরেক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার পরিচিত আরেকজন পরীক্ষার্থী ছিল মুসলিম অ্যাকাডেমিতে। তাকে ওখানে রেখে ঠিক ৯.৩১ মিনিটে আমি গেটের সামনে এসেছি, কিন্তু তারা কোনোভাবেই আমাকে ঢুকতে দেবে না। আমি বারবার বলেছি যে, এক মিনিট তো খুব বেশি দেরি না। অনেক সময় তো ঘড়ির কাঁটাও এক মিনিট এদিক-সেদিক হতে পারে। কিন্তু আমাদের কোনো রিকুয়েস্টই রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, আমি কক্সবাজারে একটা চাকরি করি, সেখান থেকে পরীক্ষা দিতে ঢাকায় এসেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে ১ মিনিটের জন্য আমি পরীক্ষার কেন্দ্রেই ঢুকতে পারিনি। এটাই আমার শেষ বিসিএস ছিল।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান এবং পিএসসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে পিএসসি চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের নিয়মই ছিল ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। এ বিষয়ে আমরা বারবার বলেছি, একটু সময় নিয়ে কেন্দ্রে আসবেন, ৩০ মিনিট আগেই কেন্দ্রে প্রবেশ করবেন। তারপরও যদি কোনো শিক্ষার্থী যথাসময়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে আসতে না পারে, তাহলে আমাদের দৃষ্টিতে সে পরীক্ষার অযোগ্য।

এক মিনিটের জন্যও শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করা যেত কি-না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, একজন এসে বলবে এক মিনিট, আরেকজন এসে বলবে পাঁচ মিনিট, এসব শুনলে তো আমার হবে না। তারপরও আমি ওই কেন্দ্রে কথা বলে দেখছি কী করা যায়।