মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাজুলের ত্রাসের রাজত্ব পর্ব-৪

তাজু ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক, আলোচনায় তার শ্যালক মহব্বত ভাতিজা আমির

  • আবু ইউসুফ
  • আপডেট এর সময় ১০:০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৫০ কত জন দেখেছেন
খবরটি শেয়ার করুন

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন আদালতে বক্তৃতা মঞ্চে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে নিজেকে ভালো মানুষ দাবি করা সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হলেও তাকে এখনো খুঁজে পায়নি প্রশাসন। অথচ সাবেক এই মন্ত্রী লাকসাম মনোহরগঞ্জে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই নেমে আসত বিভীষিকাময় নির্যাতন। বিরোধী মতের উপর নির্যাতন চালাতে শ্যালক মহব্বত আর ভাতিজা আমিরকে দিয়ে লাকসাম মনোহরগঞ্জে তৈরি করেন বিশেষ টর্চার সেল। যার মাধ্যমে সায়েস্তা করা হতো তাজু বিরোধী মতের।
অর্থবিত্তে ঠিক কতটা ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব না হলেও তার সঙ্গে থাকা ছোট নেতারাও বনে গেছেন শতশত কোটি টাকার মালিক। ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপে লাকসাম মনোহরগঞ্জ শাসন করা এই আওয়ামী লীগ নেতার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। তার বিত্তের ভান্ডার দেখাশোনা করা শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা শাহাদাত ও আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল, এপিএস হিসেবে পরিচিত জাহিদও আত্মগোপনে। এদের মাধ্যমেই ঠিকাদারি আর চাকরিসহ সব সেক্টর থেকে পার্সেন্টেজ আদায় করতেন তাজুল ইসলাম।
কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস কখনোই পায়নি কেউ। মৃদু প্রতিবাদেও ধ্বংস হয়ে যেত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কেবল আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি নেতারাও ভয়ে কখনো কথা বলত না তার বিরুদ্ধে। যেন সবার কাছেই জ্যান্ত আতঙ্ক ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তাজুল ইসলাম ছিলেন বিএনপি জামায়াতের ঘোর বিরোধী, বিএনপি জামায়াতের সাথে কোনো আওয়ামী লীগ পরিবারের আত্মীয়তা ছিলো নিষিদ্ধ। জিয়াউর রহমানকে নিয়েও করতেন চরম কটূক্তি। হাসিনা সরকারের পতনের পর তাজুল ইসলাম ও তার আত্মীয় স্বজনদের অনেকে পালিয়ে গেলেও তার পালিত সন্ত্রাসীদের অনেকেই এলাকায় অবস্থান করছে। এনিয়ে লাকসাম মনোহরগঞ্জ বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে লাকসাম মনোহরগঞ্জের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘ক্ষমতার আমল কেবল নয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তাজুলের প্রশ্নে নেতিবাচক কিছু বলার সাহস পেত না কেউ। অথচ লাকসাম মনোহরগঞ্জে হেন দুর্নীতি নেই যা করেননি এই নেতা। সব দপ্তরের ঠিকাদারি কাজে নির্দিষ্ট অঙ্কের পার্সেন্টেজ দিতে হতো তাকে। টিআর কাবিখা আর সংসদ-সদস্যদের নামে বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিতেন টাকা।’
লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা যেকোনো পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হতো মন্ত্রীর নির্ধারিত প্রতিনিধিকে। এখানে সব ধরনের নিয়োগেই ছিল একই নিয়ম।’
কুমিল্লা সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যত ধরনের ঠিকাদারি টেন্ডার, সব ক্ষেত্রেই তাজুকে দিতে হতো টাকা। ঠিকাদার নির্বাচন প্রশ্নেও তার সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। আর এসব নিয়ন্ত্রণে ছিলো তার শ্যালক মহব্বত আলী, ভাতিজা আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন কামালের মাধ্যমে। কথা না শুনলে কেবল বদলি নয়, শারীরিক মানসিকভাবেও হতে হতো হেনস্তা।’ সড়ক বিভাগের মতো এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, থানা প্রকৌশলী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল একই অবস্থা। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের সকল বিজ্ঞাপন দিতে হতো তার প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায়।
বেপরোয়া এই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে গত ১৬ বছর ধরে শত শত কোটি টাকা আয় দিয়ে স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক, ভাতিজাসহ নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এসব সম্পদ বাঁচাতে ডাল হিসেবে প্রকাশ করেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ নামে একটি পত্রিকা। তার অধীন মন্ত্রণালয়ের সকল বিজ্ঞাপন বাধ্যতামূলক দিতে হতো তার পত্রিকায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর তেমন একটি ভরসা ছিল না তার। তাই তৃণমূল আওয়ামী লীগকে দূরে সরিয়ে নিজেই লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, শ্যালক মহব্বত আলীকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মামাতো ভাই মাস্টার আবদুল কাইয়ুমকে মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভাতিজা আমিরুল ইসলামকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। যাদের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না তাজু। সব টাকাই তার নিজস্ব মাধ্যমে পৌঁছাতে হতো তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে কাজ করতেন এপিএস জাহিদ, শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল।
মন্ত্রী থাকাকালে তাজুর এপিএস ছিলেন জাহিদ। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আলোচিত এই জাহিদের বাড়ি ফেনী জেলায়। এপিএস জাহিদও শত কোটি টাকার মালিক। জাহিদ এবং মন্ত্রীর আরেক ভাতিজা শাহাদাত হোসেন নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য। এরা সম্পদ ভান্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়, তার লাকসাম মনোহরগঞ্জ নির্বাচনি এলাকায় তাজুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তারা।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে লাকসাম উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘তাজুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নিতে হতো জাহিদের। এছাড়া এলাকার উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন শ্যালক মহব্বত ও ভাতিজা আমির । তাদের কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না তাজু। পরিস্থিতি এমন ছিল মহব্বত আর আমির যেন ছিলেন তাজুল ইসলামের ছায়া। এদের মাধ্যমেই নির্বাচনি এলাকা থেকে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন তাজুল ইসলাম।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাজুল ইসলাম তার শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল হোসেন এপিএস জাহিদও পালিয়ে গেছেন।

ট্যাগঃ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

তাজুলের ত্রাসের রাজত্ব পর্ব-৪

তাজু ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক, আলোচনায় তার শ্যালক মহব্বত ভাতিজা আমির

আপডেট এর সময় ১০:০৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
খবরটি শেয়ার করুন

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন আদালতে বক্তৃতা মঞ্চে আল্লাহর নামে কসম খেয়ে নিজেকে ভালো মানুষ দাবি করা সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা দায়ের হলেও তাকে এখনো খুঁজে পায়নি প্রশাসন। অথচ সাবেক এই মন্ত্রী লাকসাম মনোহরগঞ্জে ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। তার বিরুদ্ধে কথা বললেই নেমে আসত বিভীষিকাময় নির্যাতন। বিরোধী মতের উপর নির্যাতন চালাতে শ্যালক মহব্বত আর ভাতিজা আমিরকে দিয়ে লাকসাম মনোহরগঞ্জে তৈরি করেন বিশেষ টর্চার সেল। যার মাধ্যমে সায়েস্তা করা হতো তাজু বিরোধী মতের।
অর্থবিত্তে ঠিক কতটা ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী তা সঠিকভাবে জানা সম্ভব না হলেও তার সঙ্গে থাকা ছোট নেতারাও বনে গেছেন শতশত কোটি টাকার মালিক। ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত দোর্দণ্ড প্রতাপে লাকসাম মনোহরগঞ্জ শাসন করা এই আওয়ামী লীগ নেতার বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানে না কেউ। তার বিত্তের ভান্ডার দেখাশোনা করা শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা শাহাদাত ও আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল, এপিএস হিসেবে পরিচিত জাহিদও আত্মগোপনে। এদের মাধ্যমেই ঠিকাদারি আর চাকরিসহ সব সেক্টর থেকে পার্সেন্টেজ আদায় করতেন তাজুল ইসলাম।
কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি, লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস কখনোই পায়নি কেউ। মৃদু প্রতিবাদেও ধ্বংস হয়ে যেত রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। কেবল আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি নেতারাও ভয়ে কখনো কথা বলত না তার বিরুদ্ধে। যেন সবার কাছেই জ্যান্ত আতঙ্ক ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তাজুল ইসলাম ছিলেন বিএনপি জামায়াতের ঘোর বিরোধী, বিএনপি জামায়াতের সাথে কোনো আওয়ামী লীগ পরিবারের আত্মীয়তা ছিলো নিষিদ্ধ। জিয়াউর রহমানকে নিয়েও করতেন চরম কটূক্তি। হাসিনা সরকারের পতনের পর তাজুল ইসলাম ও তার আত্মীয় স্বজনদের অনেকে পালিয়ে গেলেও তার পালিত সন্ত্রাসীদের অনেকেই এলাকায় অবস্থান করছে। এনিয়ে লাকসাম মনোহরগঞ্জ বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে রয়েছে ক্ষোভ। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে লাকসাম মনোহরগঞ্জের একাধিক বাসিন্দা বলেন, ‘ক্ষমতার আমল কেবল নয়, ক্ষমতার বাইরে থাকলেও তাজুলের প্রশ্নে নেতিবাচক কিছু বলার সাহস পেত না কেউ। অথচ লাকসাম মনোহরগঞ্জে হেন দুর্নীতি নেই যা করেননি এই নেতা। সব দপ্তরের ঠিকাদারি কাজে নির্দিষ্ট অঙ্কের পার্সেন্টেজ দিতে হতো তাকে। টিআর কাবিখা আর সংসদ-সদস্যদের নামে বিশেষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও নিতেন টাকা।’
লাকসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা যেকোনো পদে লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হতো মন্ত্রীর নির্ধারিত প্রতিনিধিকে। এখানে সব ধরনের নিয়োগেই ছিল একই নিয়ম।’
কুমিল্লা সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যত ধরনের ঠিকাদারি টেন্ডার, সব ক্ষেত্রেই তাজুকে দিতে হতো টাকা। ঠিকাদার নির্বাচন প্রশ্নেও তার সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত। আর এসব নিয়ন্ত্রণে ছিলো তার শ্যালক মহব্বত আলী, ভাতিজা আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল। ই-টেন্ডার চালু হওয়ার পরও নানা কৌশলে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন কামালের মাধ্যমে। কথা না শুনলে কেবল বদলি নয়, শারীরিক মানসিকভাবেও হতে হতো হেনস্তা।’ সড়ক বিভাগের মতো এলজিইডি, শিক্ষা প্রকৌশল দপ্তর, গণপূর্ত, থানা প্রকৌশলী এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগসহ সব ক্ষেত্রেই ছিল একই অবস্থা। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের সকল বিজ্ঞাপন দিতে হতো তার প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায়।
বেপরোয়া এই অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে গত ১৬ বছর ধরে শত শত কোটি টাকা আয় দিয়ে স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক, ভাতিজাসহ নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। এসব সম্পদ বাঁচাতে ডাল হিসেবে প্রকাশ করেন দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ নামে একটি পত্রিকা। তার অধীন মন্ত্রণালয়ের সকল বিজ্ঞাপন বাধ্যতামূলক দিতে হতো তার পত্রিকায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপর তেমন একটি ভরসা ছিল না তার। তাই তৃণমূল আওয়ামী লীগকে দূরে সরিয়ে নিজেই লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, শ্যালক মহব্বত আলীকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মামাতো ভাই মাস্টার আবদুল কাইয়ুমকে মনোহরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভাতিজা আমিরুল ইসলামকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে নিজস্ব বলয় গড়ে তোলেন। যাদের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনে বেপরোয়া হয়ে উঠেন।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘এমন কোনো সেক্টর নেই যেখান থেকে টাকা পেতেন না তাজু। সব টাকাই তার নিজস্ব মাধ্যমে পৌঁছাতে হতো তার কাছে। লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে কাজ করতেন এপিএস জাহিদ, শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল।
মন্ত্রী থাকাকালে তাজুর এপিএস ছিলেন জাহিদ। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, আলোচিত এই জাহিদের বাড়ি ফেনী জেলায়। এপিএস জাহিদও শত কোটি টাকার মালিক। জাহিদ এবং মন্ত্রীর আরেক ভাতিজা শাহাদাত হোসেন নিয়ন্ত্রণ করতেন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ বাণিজ্য। এরা সম্পদ ভান্ডারের দেখাশোনা আর পার্সেন্টেজ আদায় নয়, তার লাকসাম মনোহরগঞ্জ নির্বাচনি এলাকায় তাজুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও দেখাশোনা করতেন তারা।
পরিচয় না প্রকাশের শর্তে লাকসাম উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘তাজুর সঙ্গে দেখা করতে হলে অনুমতি নিতে হতো জাহিদের। এছাড়া এলাকার উন্নয়নমূলক সব কাজের ভাগ-বাটোয়ারা করতেন শ্যালক মহব্বত ও ভাতিজা আমির । তাদের কথার বাইরে বলতে গেলে এক পা-ও চলতেন না তাজু। পরিস্থিতি এমন ছিল মহব্বত আর আমির যেন ছিলেন তাজুল ইসলামের ছায়া। এদের মাধ্যমেই নির্বাচনি এলাকা থেকে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছেন তাজুল ইসলাম।
গত ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর তাজুল ইসলাম তার শ্যালক মহব্বত, ভাতিজা আমির, কথিত উন্নয়ন সমন্বয়ক কামাল হোসেন এপিএস জাহিদও পালিয়ে গেছেন।