পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া তিন কন্যা সন্তানের জনক স্বামীকে বাধা দেয়ায় স্ত্রীর কাছে মোটা অংকের যৌতুক দাবি এবং শারীরিক নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগে গত ৩ জুন সোমবার আদালতে স্বামী ইসমাইল হোসেন সাদ্দাম, শ্বশুর ও শাশুড়ি তাহেরা খাতুনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন আমেনা খাতুন (৩৫) নামে এক গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে মনোহরগঞ্জ উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মানরা গ্রামে। মামলার বিষয়টি জানার পর সাদ্দাম ও তার পরিবারের লোকজন মিলে মামলা তুলে নিতে আমেনা খাতুন ও তার পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে। হুমকিতে মামলা তুলে না নেয়ায় গতকাল ইসমাইল হোসেন সাদ্দাম স্যোসাল মিডিয়ায় লাইভে এসে আমেনা খাতুন ও তার ২ ভাইয়ের বিরুদ্ধে ঘরের বিভিন্ন মালামাল নিয়ে আসার মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে দিয়ে হেয় করার চেষ্টা চালায়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ মে দুপুর দেড়টার দিকে আমেনার কাছে সাদ্দাম হোসেন ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে, টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।
সূত্রে আরো জানা যায়, ১৮ মে ২০১১ সালে হাসনাবাদ গ্রামের সুলতান আহমেদের মেজো মেয়ে আমেনা খাতুনের সাথে পার্শ্ববর্তী মানরা গ্রামের আফাজ উদ্দীনের বড় ছেলে ইসমাইল হোসেন সাদ্দামের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ফাতেমা আক্তার মিম (১২) সিদরাতুল মুনতাহা (৮), সারিয়া আক্তার (৪) নামে তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
সূত্রে আরো জানা যায়, ইসমাইল হোসেন সাদ্দাম (৩৮) দীর্ঘদিন ধরে একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরকীয়ার বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়লে সাদ্দামের স্ত্রী আমেনা খাতুন প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ, সময় অসময়ে মারধোর করা হতো তাকে। এনিয়ে আমেনা খাতুন তার শ্বশুর আফাজ উদ্দীন, শাশুড়ি তাহেরা বেগমকে জানালে তারা উল্টো আমেনাকে দোষারোপ করে তাদের আরো দুই ছেলে ইয়াসিন ও তারেক মিলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। কয়েকবার মারধোর করা হয় তাকে। এনিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। সাদ্দাম এবং তার পরিবারের লোকজন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে, দাবি করে মোটা অংকের যৌতুক। আমেনার শাশুড়ি তাহেরা বেগম মোটা অংকের টাকা দাবি করে বলে টাকা না দিলে তার ছেলে বিয়ে করবে কেউ আটকাতে পারবেনা।
এর আগে একবার আমেনা আক্তার ঘরের সামনে কাজ করা অবস্থায় তার দেবর ইয়াসিন আমেনাকে গালাগালি করতে থাকে, এসময় আমেনা পাশ্ববর্তী এক মহিলাকে শুনতে বললে ইয়াসিন এলোপাতাড়ি মরধর করতে থাকে। এসময় আমেনার চিৎকার আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে ইয়াসিন পালিয়ে যায়। এনিয়ে আমেনা মনোহরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়ে বাড়িতে আসলে তাকে ঘরে ঢুকতে দেয়নি। পরে স্থানীয় মেম্বার আলমগীর হোসেন আমেনা ও তার দুই সন্তানকে তাদের ঘরে আশ্রয় দেয়। পরে এনিয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় সালিশের মাধ্যমে সাদ্দামের পরিবারকে সতর্ক করে মীমাংসা করে দেয়া হয়।
এরপর গত ৩০ নভেম্বর আমেনার স্বামী সাদ্দাম হোসেন অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালায় একপর্যায়ে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে হত্যা চেষ্টা চালায়। সাদ্দাম নানাভাবে হুমকি দিতো হয় টাকা দিবে না হয় তাকে বিদায় করে দ্বিতীয় বিয়ে করবে। এনিয়ে গত ১৫ এপ্রিল স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সালিশ করে তাদেরকে শেষবারের মতো সতর্ক করা হয়।
এনিয়ে আমেনার এক ভাই জানান বোনের সুখের জন্য মান সম্মানের কথা চিন্তা করে চুপ থেকে বিভিন্ন সময় তাকে টাকা পয়সা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আর না এবার আইনের মাধ্যমে তাকে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। গ্রামের লোকজন জানান আফাজ উদ্দীনের পরিবারের সবাই খারাপ প্রকৃতির লোক, মান সম্মানের ভয়ে কেউই কথা বলেনা। তারা বলেন এদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া দরকার।
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনামঃ
মনোহরগঞ্জে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করে স্ত্রীকে নির্যাতন
- কুমিল্লা প্রতিনিধি
- আপডেট এর সময় ০৭:৫৯:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪
- ১৪৫ কত জন দেখেছেন
ট্যাগঃ
জনপ্রিয়