আবু ইউসুফ
গায়ে পাঞ্জাবি পাজামা, বক্তৃতার মঞ্চে কোরআন হাদিসের উদ্ধৃতি আর পীর বংশের পরিচয়ে শতভাগ সততার ঢোল পেটানো সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ছিলেন পুরোপুরি উল্টো চরিত্রের লোক। তার লোভ আর দানবীয় ক্ষমতার দাপটে অসহায় ছিলো লাকসাম- মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা। তাজুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হওয়ার পর এখানে তাজুলীগ প্রতিষ্ঠায় মেতে উঠেন। ধীরে ধীরে সেটিও প্রতিষ্ঠিত হয়, তাজুলীগ ছাড়া তার কাছে আর কারো মূল্য ছিলোনা। দানবীয় প্রকৃতির তাজুল ইসলাম দ্বিতীয়বার এমপি হওয়ার পর তার রাক্ষসে ভাব স্বরূপে আবির্ভূত হয়। নজর পড়ে লাকসামের কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের উপর। ২০১০ সালে কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে লাকসাম সমবায় ব্যাংকের গ্রাহকদের সঞ্চিত টাকায় কেনা স্থাবর অস্থাবর শত কোটি টাকার সম্পদ দখল করে নেন তাজুল ইসলাম।
জানা যায় লাকসাম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের বিরুদ্ধে মানি ডিক্রিজারি মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ সময় ব্যাংক লিমিটেড এবং ১৮ আগস্ট ২০০৪ তারিখে ওই ব্যাংকের স্হাবর সম্পত্তি নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। ওই নিলাম বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে ২ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে তৎকালীন লাকসাম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান অলিউল্লাহ খান নিলাম কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য সময় ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়ে একটি চিঠি দেন। কিন্তু ওই চিঠির গুরুত্ব না দিয়ে লাকসাম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্তে অটল থাকে। স্থানীয়দের দাবি তৎকালীন এমপি তাজুল ইসলামের সমবায় ব্যাংকের সম্পত্তি দখলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই অলিউল্লাহ খানের চিঠির গুরুত্ব দেয়নি সময় ব্যাংক। অবশেষে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে লাকসাম কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড নিলামে বিক্রি হয়। নিলামে তাজুল ইসলামের ক্যাডার বাহিনীর বাধায় অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই নিলামে অংশগ্রহণ করতে পারেনি।
কূটকৌশলে পাকা খেলোয়াড়, তাজুল ইসলাম তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামকে দিয়ে চট্টগ্রামের বান্দরবানের পাহাড়ের শত শত একর জমি জবর দখল করে নেন ।
জানা যায় মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ক্ষমতার দাপটে তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামও অবৈধ দখল উৎসবে মেতে উঠেন। স্বামীর দানবীয় ক্ষমতার শক্তিতে পিছিয়ে ছিলেননা মন্ত্রীপত্নী ফৌজিয়া ইসলাম। সম্পদ অর্জনে ক্ষমতাধর স্বামীর সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন ফৌজিয়া। তাজুল রাস্তাঘাট, পুল কালভার্ট থেকে যখন অবৈধ কমিশনের হাজার হাজার কোটি টাকার হিসাব কষেন তখন স্ত্রী ফৌজিয়া খামারের শখ পূরণ করতে মেতে উঠেন বান্দরবানে পাহাড় অবৈধ দখলের উৎসবে। মন্ত্রীর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এক হাত কিনে ১০ হাত দখলের মতো দখল করে নেন অসহায় পাহাড়ি পরিবারের শতশত একর জমি। এনিয়ে পাহাড়ি জমির মালিকরা মামলা করলেও কোনো লাভ হয়নি, উল্টো তাদেরই এলাকা ছাড়া করেন ফৌজিয়া ইসলাম। এনিয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রী তাজুল ও তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বান্দরবানের ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা। মানববন্ধনে বান্দরবানে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম কর্তৃক অসহায় পরিবারের জায়গা, চলাচলের রাস্তা জোরপূর্বক দখলের প্রতিবাদে এবং দখলীয় জায়গা পুনরুদ্ধার করে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সেখানকার ভুক্তভোগীরা।
বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সামনে দেরাজ মিয়াপাড়া, ফুইট্টা ঝিরি, টংগঝিরি, পূর্গা খোলা, প্রিয়শরীর প্রায় শতাধিক পাহাড়ি বাঙালি নারী-পুরুষ এ মানববন্ধন করেন।
মানববন্ধনে তারা বলেন, বহিরাগত সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম বর্তমানে আত্মগোপনে থেকে তাদের স্বজন শাহ আলম মুকুলের মাধ্যমে স্থানীয় সন্ত্রাসী মহাকাত আলী, শাহাব উদ্দিন, বাবুল, বেদু, দেলুয়ার, লিয়াকত, সোহরাব, রায়হান, শাহেব মিয়াসহ কয়েকজনকে দিয়ে আমাদের জায়গায় থাকা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে এবং জায়গা থেকে সরে না গেলে প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সময় মামলা দেওয়ার পরও এসব সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। এ সময় তারা সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলাম ও তার স্বজন শাহ আলম মুকুলসহ সব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
তাদের দাবি, চট্টগ্রামে থাকা শাহ আলম মুকুলকে গ্রেফতার করলে আত্মগোপনে থাকা সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে সহজে গ্রেফতার করা সম্ভব।
তারা আরও বলেন, সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তার স্ত্রী ও স্বজন শাহ আলম মুকুল লামার সরইয়ের দেরাজ মিয়াপাড়ায় ভুয়া কাগজ তৈরির মাধ্যমে এসব অসহায় পরিবারের প্রায় ৫শ একরেরও বেশি জমি বেদখল করেছেন। তাই অতিসত্ত্বর এসব জায়গা উদ্ধার করে অসহায় পরিবারকে ফিরিয়ে দিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। গত ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তাজুল ইসলাম।