[caption id="attachment_215" align="alignnone" width="300"] বাস্তব কোনো ঘটনার সাথে মিলে গেলে হবে কাকতালীয়।[/caption]
এক.
কর্মহীন জীবন যন্ত্রণাময় অগ্নিগোলার মতো, যা মনের চিন্তা চেতনা স্বপ্ন সবকিছু জ্বালিয়ে মূল্যহীন ছাইয়ে পরিণত করে দেয়। অলসতার অলিক সব স্বপ্ন ভিড় করে, জীবনের সব স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করে মাতালের মতো মূল্যহীন করে ছাড়ে। কর্মহীন শহুরে জীবনের সেসব অলিক স্বপ্ন থেকে বাঁচতে দিনের শেষে সবুজ শ্যামল ঘেরা মাঠে একটু প্রশান্তির জন্য প্রতিদিন বিকেলে যাওয়া হয় পার্কে।
আমার মতো হাজারো লোক প্রতিদিনই ভিড় করেন বিভিন্ন পার্কে, কেউ যায় ডাক্তারের পরামর্শে কেউ যায় প্রিয় মানুষকে নিয়ে কোলাহলমুক্ত পরিবেশে নিবৃত্তে একটু সময় কাটানোর জন্য। আর আমি যাই, বেকার জীবনের বিষাদ সময়টা শেষ হয় না বলে! দুপুরের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পার্কের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত হেঁটে অথবা পাকা বেঞ্চে শুয়ে, কখনো পিঠের উপর বস্তা ঝোলানো ছেলেমেয়েদের ঝগড়া দেখে কেটে যায় অলস সময়।
অনেকদিন থেকেই আসা হয় এই পার্কে অবশ্য এটা ছাড়া আর কোনো পার্ক চিনিওনা, তাও চিনিয়েছে বন্ধু হাসু, যার বাসায় রাত কাটে আমার। আজ কেন জানি ভাললাগছে না, সন্ধ্যার একটু পরে রমনা পার্ক থেকে কাকরাইল মসজিদের পাশের গেট দিয়ে বেরিয়ে ফুটপাতের উপর দিয়ে দ¶িণ দিকে হেঁটে যাচ্ছি, সামনে কালো গ্লাসের হাইচ গাড়ি দাঁড়ানো, পাশে স্মার্ট দুই যুবক দাঁড়িয়ে আছে, দুজনেরই মুখে কালো মাস্কস পরা।
পাশ দিয়ে যেতেই সার্টের কলার ধরে টান দিয়ে গাড়ির ভেতর তুলে নেয় আমাকে। আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যাই, ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা। গাড়িতে তুলতেই দরজা আটকিয়ে ভোঁ টান। চিৎকার করবো, এ সময় একজন কষে এক চড় বসিয়ে দেয় গালে। মনে হয়েছে হঠাৎ ভূমিকম্পে উঁচু দালান ভেঙে আমার মাথায়! মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। তাকিয়ে দেখার সাহসটুকুও হারিয়ে ফেলেছি, তবুও চোখ মেলে তাকালাম, দেখি চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেছে ঝিমধরে বসে থাকি। দ্বিতীয়বার চিৎকার করার সাহস আর হয়নি। ঝাপসা দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি গাড়িতে আরো দুজন, বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে চলছে গাড়ি, যেন বাজপাখি নিমিষেই তার শিকারটি ছোঁ মেরে তুলে নিল। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, কেন নিয়ে যাচ্ছে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ।
এ সময় পেছন থেকে একজন চোখ বেঁধে ফেলে, বাঁধার সময় বাধা দিতে গিয়ে থেমে যাই, যদি চড়ের চাইতে আরো বেশি কিছু হজম করতে হয়। আজ কাল তো আমাদের মতো মানুষ নামের জীবের কোনো মূল্য নেই, এখানে সেখানে পড়ে থাকে শ্রেষ্ঠজীবের নিথর দেহ। কার নাড়ি ছেঁড়া ধন কিংবা স্বপ্ন বোনা সন্তানের বাবা তার কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না, এ চিন্তা আসতেই সুবোধ বালকের মতো নিশ্চল বসে থাকি। চোখ বাঁধা শেষে দুহাত এক করে রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেলে। প্রচণ্ড ব্যথায় কুকড়ে উঠি, এভাবে আর কখনো হাত বাঁধার শিকার হয়নি তাই নিচু সুরেই বললাম।
ব্যথা পাচ্ছি কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না, মনে হচ্ছে সবাই বাকপ্রতিবন্ধী।
ভয়ে গলাটা শুকিয়ে গেছে, মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে পানি খেতে না পারলে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। পানি চাইবো, না চাইবো দ্বিধায় পড়ি, পানি চাইলে আবার কোনটা ঘটে সে আশংকাও মনের ভেতর উঁকি দেয়। পানি খেতে না পারলে সবচাইতে বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারে সেটাও ভাবতে হচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে গলাটা যেন একবারে শুকিয়ে আটকে গেছে। জীবন বাঁচাতে মৃত্যুর সামনেও রুখে দাঁড়ায় সব জীব, তা হলে আমি কেন পারবো না! তাই সাহস করে বললাম।
ভাই গলাটা শুকিয়ে গেছে একটু পানি হবে?
কোনো শব্দ নেই, শুনছে কি না জানি না, নড়া চড়ারও কোনো আলামত নেই। ভাবলাম হয়তো গাড়ির শোঁ শোঁ শব্দে আমার কথা শুনতে পায়নি তাই আবারো পানির কথা বলবো এ সময় গালে ঠাণ্ডা বোতলের স্পর্শ! মনে হচ্ছে এইমাত্র ফ্রিজ থেকে আনা হয়েছে। ঠাণ্ডার স্পর্শে ভয়ের মাঝেও কিছুটা স্বস্তি পেলাম। কিন্তু পানি খাবো কিভাবে দুহাত যে বাঁধা! হাতের বাঁধন খুলে দিতে বলবো ঠিক তখনি গালে হাতের স্পর্শ! এবার দুই গালকে আঙুল দিয়ে টিপে ধরলো এমনভাবে ধরলো মনে হচ্ছে গালের গোস্ত দাঁতের ফাঁকে ঢুকে যাবে! ব্যথা করতেই হা করে রইলাম। হা করতেই ঠাণ্ডাপানি মুখের ভেতর ঢেলে দেয়া হয়। পানির ঢোক গিলতে কিছু পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আবারো হা করতে পানি ঢেলে দেয়া হয় মুখে। পানির পিপাসা কিছুটা কেটে যায়।
গাড়ি চলছে তো চলছে, থামার কোনো ল¶ণ নেই। মনে মনে দোয়ায়ে ইউনুছ পড়তে থাকি আমাদের মতো সাধারণ লোকদের বিপদের একমাত্র বন্ধু দোয়ায়ে ইউনুছ। আল্লাহ ধনী গরিব সবার জন্য এটা উপহার হিসাবে পাঠিয়েছেন তবে গরিবরাই এটাকে সবচাইতে বেশি গ্রহণ করে। কারণ এ দোয়ার উছিলায় আল্লাহ হযরত ইউনুছ নবীকে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করেন। তার জন্য গরিবরা কোনো বিপদে পড়লে প্রথমেই এই দোয়ায়ে ইউনুছের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে এ মুহূর্তে আমিই পৃথিবীর সব চাইতে মহাবিপদে পড়েছি। কারণ আমি জানি না ওরা কারা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কেন নিয়ে যাচ্ছে বা কার কাছে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এই মহাবিপদের সময় মনে মনে এই দোয়ায়ে ইউনুছ পড়তে থাকি।
কিছু¶ণ পর-পর বাঁক নেয় গাড়ি, প্রথমে উত্তর দিকে গেলেও কয়েকবার ডানে বামে বাঁক নেয়াতে এখন বুঝতে পারছি না কোন দিকে যাচ্ছে গাড়ি। সবাই চুপচাপ কারো মুখে কোনো কথা নেই। নীরব নিস্তব্ধ পরিবেশে শুধু দ্রুতগতিতে চলা গাড়ির শোঁ-শোঁ শব্দ আর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গাড়ির হর্নের শব্দ।
আস্তে আস্তে সে শব্দও কমে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে ওরা শহরের বাইরে চলে এসেছে। এবার ভয়টা চেপে ধরে, দোয়ায়ে ইউনুছটাও মুখে আটকে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে মৃত্যুটা ঘাড়ের খুব কাছে বসে নিঃশ্বাস ফেলছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘাড় মটকে ছুড়ে ফেলতে পারে রাস্তার দ্বারে অথবা কোনো নদীতে। এসব ভাবতে ভাবতে শরীরটা ঘেমে একাকার। এছাড়া মনের ভেতর বার বার প্রশ্ন জাগে ওরা পুলিশ নাকি ভয়ংকর কোনো গোষ্ঠী। তবে পুলিশ হলে চোখ বাঁধতো না কারণ পুলিশ কাউকে ধরার পর চোখ বাঁধার সংবাদ পাইনি শুধুমাত্র র্যাব পুলিশ চোখ বাঁধে কিন্তু হাত বাঁধার স্টাইল দেখে র্যাব পুলিশও মনে হয়নি, নিশ্চয় তারা প্রথমে হাতকড়া লাগিয়ে দিত। আবার ভাবলাম আজকালতো সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশের নামে অনেককে এভাবে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে, তারা কিভাবে বাঁধে তাতো জানা নেই। যাই হোক বাঁধা হাত দুটো ব্যথায় টন টন করছে, মনে হচ্ছে হাত ফুলে গেছে, আর বাঁধনটা আরো শক্ত হচ্ছে ব্যথা সহ্য করতে না পেরে বললাম।
ভাই হাতটা খুব ব্যথা করছে। বাঁধনটা যদি একটু ঢিলে করে দিতেন।
ব্যথার কথা শুনে একজন হাত দিয়ে দেখলো! কোনো কথা বললো না, শুধু বাঁধনটা ঢিলে করে দিল। অমনি তাকে ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম, যদিও জানি না সে ধন্যবাদ পাওয়ার মতো লোক কি না। কিন্তু বাঁধন খোলার পর মনে যে শান্তি অনুভব করলাম মনের অজান্তেই ধন্যবাদটা চলে আসে। হঠাৎ গাড়ির ব্রেক! প্রচণ্ড ঝাঁকুনি খায় সবাই, আমিত উল্টে গিয়ে সামনের দুই সিটের মাঝখানের খালি জায়গায় আটকে গেলাম। আর ওদের কি হয়েছে তা দেখতে পাইনি চোখ বাঁধার কারণে। দুই জন টেনে আমাকে সিটে বসায় আর একজন ড্রাইভারকে গালি দিতে থাকে। এত¶ণ পর গালি দেয়ার সুবাদে এই প্রথম একজনের কথা শুনলাম।
এবার গাড়ির গতি কিছুটা স্লো, মাঝে মাঝে গ্রাম্য রাস্তায় গর্তে পড়ার মতো ঝাঁকুনি খাচ্ছে গাড়ি, মনে হলো বড় রাস্তা ছেড়ে কোনো সরু রাস্তায় ঢুকে পড়েছি আমরা। কিছু¶ণ পরেই থেমে যায় গাড়ি, আমাকে নিয়ে ওরা গন্তব্যে চলে এসেছে। বুকের ভেতর ধক করে উঠে! ভয় আর আতংক ভর করেছে মাথায়, আজকেই বুঝি এ ধরায় আমার মেয়াদ শেষ। মাথার ভেতর কিলবিল করছে হাজার রকমের প্রশ্ন।
দরজা খোলার শব্দ পেলাম, একজন আমাকে টেনে গাড়ি থেকে নামায় এ সময় পিঠে কিসের যেন অনুভব। সামনে ধাক্কা দিয়ে কানের কাছে ফিস ফিস করে বললো।
চিৎকার চেঁচামেচি করলে একদম ঝাঁঝরা করে দেব।
তখন নিশ্চিত হলাম পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে ধরা হয়েছে। তবে নিশ্চিত হইনি ওরা কারা, কেন আমাকে ধরে আনা হয়েছে। গাড়ি থেকে নেমে অনুভব করলাম কংক্রিটের রাস্তা। পায়ের স্যান্ডেল গাড়িতে তোলার সময় সেখানে পা থেকে একটি স্যান্ডেল খুলে পড়ে যায়। একটি স্যান্ডেল দিয়ে কি করবো তাই বাকিটা গাড়িতে রেখে দিলাম। কংক্রিটের রাস্তা অনুভব করে বললাম।
ভাই রাস্তা মনে হচ্ছে কংক্রিটের চোখের বাঁধনটা খুলে দিলে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতাম।
তখন একজন পিঠে ঠেস দেয়া পিস্তলের মাথায় ধাক্কা দিয়ে সামনে এগুনোর ইঙ্গিত দিলো। বুঝলাম চোখের বাঁধন খুলবে না, তাই অন্ধ হয়ে ওদের সাথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে ধারালো কংক্রিট পায়ে ঢুকে যাচ্ছে! ব্যথায় বসে যেতে হচ্ছে কিন্তু বসতে পারছি না, বসতে চাইলে সার্টের কলার টেনে ধরে একজন। বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে কিন্তু ভয় আর আতংকে কাঁদতেও পারছি না, শুধু চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
কোথাও কোনো সাড়া শব্দ নেই, চারদিকে সুনসান নীরবতা। সামনে এগিয়ে যাচ্ছি কংক্রিট থেকে ঘাসের উপর পা পড়ে, কী মসৃণ, যেন ক্রিকেট মাঠের আউটফিল্ড চিকন ঘাসগুলো মেশিনে কেটে মসৃণ করা হয়েছে। শীতলে যেন শীররটা খেলে গেল। ঘাসের রাস্তায় বেশি¶ণ হাঁটতে হয়নি, এবার পায়ের তলায় পড়লো এবড়ো থেবড়ো সিঁড়ি। পায়ের তলায় সিঁড়ি পড়তেই পা যেন অবশ হয়ে পড়ে। নিঃশ্বাসের গতি আগের চাইতে বেড়ে যায়। পুরো শরীর অবসাদ হয়ে বরফের চাকার মতো শক্ত হয়ে উঠে। মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠে আর কত সময় মেয়াদ আছে আমার?
সিঁড়ি বেয়ে শেষ করতে পারবো তো? নাকি এর আগেই মৃত্যুদূত তার কাজ শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবে! এসব ভাবতে ভাবতে থমকে দাঁড়াই কিন্তু পেছনের ইশারায় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছি। আর মনে মনে সিঁড়ির সংখ্যা গুণতে থাকি চল্লিশটা পার হওয়ার পর হোঁচট খেয়ে পড়ে যাই। একজন টেনে তোলে আমাকে। ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছি না, মনে হচ্ছে ডান পায়ের হাঁটুর নিচে ধারালো কংক্রিটের আঘাতে কেটেও যায়, কারণ রক্তের মতো কিছু গড়িয়ে পড়ছে নিচের দিকে, হাত দিয়ে দেখবো তাও পারছি না। এবার আরো দুই সিঁড়ি উঠার পর অনুভব করলাম মসৃণ ফ্লোর, একজন কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিল, দাঁড়াতেই দরজা খোলার শব্দ, দুজন আরেকটু সামনে এগিয়ে নিল, কোনো সাড়া শব্দ নেই। পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা করছে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। মন চাইছে বসে পড়ি কিন্তু বসার সাহস পাচ্ছি না। এ সময় দরজার কাছে আবারো শব্দ বুঝতে পারলাম দরজা বন্ধ করা হয়েছে। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকি। এখন পিঠে আর ঠেস নেই। দীর্ঘ¶ণপর বলে উঠলো।
ভয় নেই সামনে এসো।
কাকে বললো বুঝতে পারিনি। তবে ভয় নেই শব্দটি প্রতিধ্বনি হতে থাকে আমার কানে। মুহূর্তে যেন পৃথিবীর সমস্ত সাহস জড়িয়ে ধরে আমাকে তা দেখে ভয় আর আতংক পালিয়ে যায়। পুরো শরীরে শিহরণ জেগে উঠে।
চোখ বন্ধ করে রাখছ কেন?
তাইতো! আমার তো চোখ বাঁধা নেই, কখন যে চোখের বাঁধন খুলে দিল টেরই পাইনি!
চোখ খুলতেই যেন আলোর তেজস্ক্রিয়া এসে পড়লো চোখে, যেন ধুলিকণা এসে পড়লো আমার চোখে সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলি। হাত বাঁধা থাকায় কচলাতে পারছি না, কচলাতে পারলে খুব শান্তি পেতাম। কচলাতে না পেরে আস্তে আস্তে চোখ খুলতে থাকি যেন অপারেশনের পর ব্যান্ডিজ থেকে চোখ খুলতে হচ্ছে আমাকে।
চোখ খুলে প্রথম দৃষ্টিতে আমি অবাক! উজ্জ্বল আলোয় জলমল করছে চারদিক। সোনালি রঙে কারুকাজ করা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে। মুহূর্তের জন্য সব ব্যথা ভুলে যাই, ঘাড় বাঁকিয়ে দুই দিক দেখতে থাকি। এ সময় একজন এগিয়ে আসে আমার দিকে, তবে যারা ধরে এনেছে তাদের কেউ বলে মনে হয়নি। এসে হাতের বাঁধন খুলে দেয়। হাত ফুলে কলাগাছের অবস্থা! হাতের দিকে তাকিয়ে নীরব কান্না চলে আসে। রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় বোধশক্তি কমে যায়, তাই নাড়াতে পারছি না হাত। ধপাস করে বসে পড়ি ফ্লোরে, পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি জমাটবাঁধা রক্তে প্যান্ট ভিজে গেছে। হাত দিয়ে দেখবো তা পারছি না, তখনো হাতে বোধশক্তি আসেনি, তাই তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করতে পারছি না। হাতের বাঁধন খুলে দেয়া লোকটি তখনো আমার পাশে দাঁড়ানো।
খুব শান্ত গলায় লোকটি বললো কিভাবে কাটলো?
সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় পড়ে যাই। লোকটি মাথা নিচু করে তাকিয়ে দেখলো পায়ের দিকে।
ভাই পা’টা খুব কেটে গেছে। গলা বাড়িয়ে যেন কাউকে বলছে। কোনো জবাব আসেনি।
চল তোমার পা’টা ড্রেসিং করে দেই।
অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম।
কি বিশ্বাস হচ্ছে না? একথা বলে আমার হাত ধরে পাশের রুমে নিয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতোই সুন্দর করে পা ড্রেসিং করে ব্যথার ওষুধ খাইয়ে দেয়। তার কাজ দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। আমার বিস্ময় ভরা দৃষ্টি দেখে বললো।
তোমার জন্য আরো বিস্ময় অপে¶া করছে!
দুই.
আপনার নামটা কি জানতে পারি? লোকটি আমার থেকে বয়স্ক বলেই আপনি করে বললাম।
সব জানতে পারবে। লোকটার জবাব শুনে মনে হলো, আমাকে কেন ধরে আনা হয়েছে তা উনি জানেন।
আমিতো শুধু আপনার নামটা জানতে চেয়েছি, আর আপনি বলছেন সব। আপনার কথা বুঝতে পারলাম না।
প্রথমে ওরা কেউ বুঝেনি! পরে ঠিকই বুঝেছে। একথা বলে ইশারা করলো তার সাথে যাওয়ার জন্য। ওরা, শব্দটা শুনে পেটের ভেতর মুচড়ে উঠে। মনে হচ্ছে বাথরুমে যাওয়া দরকার।
সামনে কি তাহলে বিপদ! ভেতর থেকে প্রশ্নটা নিজে নিজেই বেরিয়ে আসে।
কি! থামলে কেন?
ভাই বাথরুমটা কোনদিকে?
ও, এসো আমার সাথে।
বাথরুমে গিয়ে পড়লাম বিপত্তিতে। বেল্ট কেনার টাকা জোগাড় করতে পারিনা বলে কোমরের চাইতে বড় মাপের প্যান্ট সব সময় রশি দিয়ে বেঁধে পরি। বাথরুমে গিয়ে দেখি রশির গিঁটটা খুব টাইট হয়ে গেছে কোনোভাবেই খুলতে পারছি না। পেটের অবস্থাও খুব খারাপ, রশির গিঁট খুলতে না পারলে এখনি প্যান্ট ভরে যাবে।
সামান্য রশির সাথে যুদ্ধাবস্থা! পুরো শরীর ঘেমে একাকার। শেষে গিঁট খুলতে না পেরে পাটের তৈরি রশিটা ছিঁড়তে গিয়ে ছিঁড়তেও পারছি না। নিরুপায় হয়ে বসে কোনোমতে পানির ট্যাপের সাথে লাগিয়ে টান দেই। রশিতো ছিঁড়লো আমিও ছিটকে পড়লাম টয়লেট ফ্লোরে।
মরার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো অবস্থা, মাথায় পেলাম ব্যথা তবুও উঠে দাঁড়ালাম।
সেকি বাথরুমের বেগ কোথায়! অনে¶ণ বসে রইলাম কমেডে কিন্তু কোনো আলামত নেই। পেটের চারপাশও টিপে দেখলাম, না কোনো আলামত নেই। মাথা টন টন করছে ব্যথায়, হাত দিয়ে দেখলাম ফুলে টিউমারের মতো হয়ে গেছে। বিরক্ত হয়ে বাথরুমের দরজা খুলতেই দেখি লোকটি দাঁড়িয়ে! আমার এক হাতে প্যান্ট ধরা দেখে বললেন।
কি ব্যাপার প্যান্ট এভাবে ধরে রাখছো কেন?
কি করবো রশিটা ছিঁড়ে গেছে।
রশি ছিঁড়ে গেছে মানে? এমনভাবে বললেন যেন এই মাত্র তিনি আশ্চার্য ধরনের কোনো গল্প শুনছেন।
জি ভাই প্যান্ট বাঁধার রশি! বেল্ট নাইতো রশি দিয়েই প্যান্ট বেঁধে রাখি। এবারতো উনি কারেন্টের সক খাওয়ার মতো স্থির এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন প্যান্টের দিকে।
কি দেখছেন এভাবে! এবার হাঁপানি রোগীদের মতো দীর্ঘ এক শ্বাস নিয়ে বললেন।
বেল্ট ছাড়াওতো মানুষ প্যান্ট পরে।
পরে, আমি পারিনা।
কেন?
আমার কোমরের চাইতে প্যান্টের কোমর বড় তাই।
প্যান্ট মাপ দিয়ে কিনো নাই?
আরে ভাই আমি প্যান্ট কিনবো কোত্থেকে।
বুঝলাম না তোমার কথা।
বুঝেন নাই? আগের প্যান্টটা কয়েক জায়গায় ছিঁড়ে গেছে, সেটা দেখে গাঁয়ের একজন তার পরনের এই প্যান্টটা দেয়। এ কথা শুনে লোকটি অমাবশ্যার আঁধারের মতো মুখটি করে আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার তাকিয়ে দেখে। মনে হচ্ছে উনি জাদুঘরে র¶িত অদেখা জিনিষকে মনভরে দেখে নিচ্ছে। খেয়াল করে দেখলাম ওনার চোখের পাতাও নড়ছে না। তাই চোখের সামনে হাত নাড়িয়ে আস্তে করে বললাম।
ও ভাই কি দেখছেন এভাবে।
লোকটি কোনো কথা না বলে বজ্রপাতে মারা যাওয়া মানুষের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তার এ অবস্থা দেখে মন চাইছিল পাচায় দুটো লাথি মারি। কিন্তু বিপদ বাড়ার আশংকায় আর মারিনি, শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম।
ভাই পারলে একটা রশি জোগাড় করে দেন, না হয় প্যান্টটা ধরে রাখতে হবে সব সময়। মুচকি হাসি দিয়ে লোকটি পাশের রুমে ঢুকলো আমিও চাতক পাখির মতো তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। কিছু¶ণ পর বেরিয়ে এলেন হাতে একটা বেল্ট, আমার দিকে ধরে বললেন।
নাও এটা পরে নাও।
অমূল্য ধন পাওয়ার মতো মুখে হাসি ফুটিয়ে বেল্টটা নিয়ে পরতেই দেখি হচ্ছে না কোমরের মাপে আরেকটা ছিদ্র করতে হবে না হলে রশি দিয়েই বাঁধতে হবে আবার। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে লোকটি আবারো বললো।
কি ব্যাপার এখনো দাঁড়িয়ে আছ কেন?
কি করবো ভাই বেল্ট হচ্ছে না।
হচ্ছে না মানে! ঝাঝালোভাবেই বলে বেল্টটা দেখে, ও ছিদ্র করতে হবে?
জি ভাই। বড় বড় চোখ করে আবারো ভিতরে গেলেন এবার বস্তা সেলাই করা মোটা একটা সুই এনে কোমরের মাপ নিয়ে কোনো মতে একটা ছিদ্র করলেন। মনের খুশিতে দ্বিগুন প্যান্টটা আটকালাম। ওনাকে অশেষ ধন্যবাদ দিয়ে আবারো নামটা জিজ্ঞাস করলাম। কোনো উত্তর না দিয়ে বললেন।
এসো আমার সাথে।
এবার যেন গলার সুরটা একটু কর্কশ মনে হলো।
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।
কি! দাঁড়িয়ে আছ কেন?
হাসি মুখ করে বললাম আপনার নামটা?
চেহারায় বিরক্তের ভাব নিয়ে বললেন, বাবুল। বুঝলাম আমার কাজে বিরোক্তবোধ করছেন তিনি।
সরি বাবুল ভাই, আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়ে দিলাম। আর আপনাকে এখানে যত¶ণ থাকবো তত¶ণ বাবুল ভাই বলে ডাকবো। একথা বলে তার সাথে ভেতরের দিকে গেলাম। একটু সহানুভূতির জন্যই কথাগুলো বললাম। দুই রুম পরেই বাবুল ভাই একটি রুমে ঢুকে পড়লেন, দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবতেছি ভেতরে ঢুকবো নাকি দাঁড়িয়ে থাকবো।
কই ভেতরে এসো।
এবার আগপিছ না ভেবে ভেতরে ঢুকে পড়ি। বাবুল ভাই ঠিকই বলেছে আমার জন্য বিস্ময় অপে¶া করছে। সত্যি বিস্ময়ের চাইতে বিস্ময় মনে হয়েছে আমার কাছে। এত সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো রুম মাথার উপর লাল নীল রঙের ঝাড়বাতি, মনে হচ্ছে দেয়াল ফেটে আলো বের হচ্ছে। সোনালি রঙের কারুকাজের কার্পেটে ঢাকা ফ্লোর। সোফা চেয়ার সব একই কারুকাজে করা। মন মাতানো সুঘ্রাণে বিমোহিত হয়ে যাই, চারদিক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। একবার আড়চোখে বাবুল ভাইয়ের দিকে তাকালাম। দেখলাম বিছানাটা পরিষ্কার করছে, আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
হাসলে হাসুক! মনটা খুব জোর দিয়েই বললো। জানালার পর্দায় হাত দিতেই বাবুল ভাই আমার হাত ধরে ফেলে।
পর্দায় হাত দেয়া যাবে না।
কেন?
এই ছেলে সাহসটাকি উতলে উঠছে?
হঠাৎ গম্ভীর কণ্ঠে শাসানো সুরে থমকে যাই। পর্দায় হাত দেয়া যাবে না হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। মাঝে মাঝে বাবুল ভাইয়ের আচরণ অদ্ভুত মনে হয়। কোন দিকে যাচ্ছে পরিস্থিতি? যে দিকেই যাক এই বাবুল ভাই এখন আমার সঙ্গী। যত¶ণ এখানে আছি তার সঙ্গে কোনো বৈরিতা করা যাবে না। কারণ বিপদের সময় পাশের মানুষটি সব চাইতে আপন। ভাবতেই ডাক দিল আবার।
কি ভাবছ এভাবে?
না, কি আর ভাববো।
দেখো এখানে ভাবাভাবি করে কোনো লাভ নেই। আর একটা কথা এখানে যত¶ণ আছ তত¶ণ এ বাড়ির কোনো কিছুর মাঝে হাত দিবে না।
আর কত¶ণ থাকবো?
সে আমি বলতে পারবো না।
আমার মতো আর কেউ ছিল এখানে? প্রশ্ন করতেই কেমন জানি আনমনা হয়ে যায় বাবুল ভাই। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কি দেখছেন এভাবে? এবার দৃষ্টি সরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে বললেন।
এসো খাওয়া দাওয়া করবে। খাওয়া দাওয়ার কথা শুনে আশ্চার্য হই। কি হচ্ছে এসব! কেন আমাকে ধরে আনা হয়েছে। আর কারা ধরে এনেছে। এসব প্রশ্ন বার বার মনে এসে নাড়া দেয়। এসব প্রশ্ন লুকিয়ে রেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করি। কারণ বিপদের সময় ধৈর্যই হচ্ছে সব চাইতে বড় শক্তি। বাবুল ভাইকে আবারো প্রশ্ন করলাম।
আর কেউ ছিল কি না। কিন্তু কোনো জবাব দিলেন না। শুধু চুপ করে রইলেন। আমি জবাবের অপে¶ায় তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
চল আগে খেয়ে নেই। আশান্বিত জবাবে তাকে অনুসরণ করি।
খেতে বসে হাসুর কথা মনে পড়ে যায়। যার সাথে আমি থাকি। হাসু নিশ্চয় আমার জন্য টেনশন করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাসায় ফিরি এখন ১০টা ফেরিয়ে গেছে। এত¶ণে হয়তো সে পার্কে গিয়ে একবার খোঁজও করেছে। হাসু প্রচÊ ভালোবাসে আমাকে, কোনো দিন আমাকে ছাড়া সে ভাত খায়নি, আজও নিশ্চয় বসে আছে। এই কয়দিনে আমিও তাকে আপন করে নিয়েছি তাকে ছাড়া একবেলা ভাতও খাইনি। আজ খেতে হচ্ছে ভাবতেই চোখে পানি চলে আসে। ভাতের পেট ঠেলে দিয়ে উঠে গেলাম।
কি হলো খাবে না?
ইচ্ছে করছে না।
বউয়ের কথা মনে পড়ছে? তার কথাশুনে মনে মনে হেসে ফেলাম।
বউ সেটা গায়ে দেয় না মাথায় দেয়?
কেন বিয়ে করোনি?
আমাকে দেখে বিয়ে করার মতো লাগে?
তাহলে কার জন্য খেতে ইচ্ছে করছে না? আরে খেয়ে নাও যার কথা মনে করে খাচ্ছনা সে হয়তো এত¶ণে খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে।
না সে খায়ওনি আর ঘুমায়ওনি।
কে সে? যে তোমার জন্য অপে¶া করবে।
হাসু।
হাসু? প্রশ্ন করেই হেসে দিয়ে বলেন।
হাসু ছেলে না মেয়ে?
সে আমার অর্ধেক! আমার কথা শুনে বাবুল ভাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন।
এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন! আমার কথা শুনে মনে হয় অবাক হয়েছেন তাইনা?
হ্যাঁ হাসু।
হাসু আমার আপন কেউ না। তবে তার নানার বাড়ি আমাদের গ্রামে, তাই তাকে ভাগিনা বলে ডাকি, হাসুও আমাকে মামা বলে ডাকে। হাসু, আমার চাইতে এক দুই বছরের ছোট হলে তার নানার বাড়িতে বেড়াতে আসলে আমার সাথেই থাকতো সারা¶ণ। পড়া লেখা তেমন একটা করেনি তবে মেধা সম্পন্ন ছিল, পড়া লেখা করলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু হতে পারতো সে। কিন্তু আস্তে আস্তে পাড়ার বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে যায় তাদের সাথে কাটাতো সারাদিন। তার বাবা ঢাকায় কি যেন চাকরি করতেন। ছেলের দিন দিন বখাটেপনা বাড়তে থাকলে ঢাকায় এনে বাড়ির কেয়ারটেকার হিসাবে কাজে লাগিয়ে দেন। কাজে লেগে যাওয়ার পরই পাল্টে যায় হাসু। তার মাঝে ফেরে আসে ভদ্র আর নম্রতা। বাড়িতে যখনই যেত আমার সাথে দেখা না করে ঢাকায় ফিরতো না। গত কয়েকমাস আগে বাড়িতে গিয়ে আমাকে তার ঠিকানা দিয়ে আসে।
হাসু দীর্ঘদিন ওই বাড়িতে কাজ করছে। বাড়ির মালিক ছিল প্রবাসী গত ছয়মাস আগে ওই প্রবাসী তার পুরো পরিবার নিয়ে বিদেশ চলে যান। যাওয়ার সময় বাড়ির পুরো দায়িত্ব তাকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়। আর হাসু থাকার জন্য নিচ তলায় দুই রুমের একটি ফ্ল্যাট দিয়ে যায় তাকে। সে থেকে বাড়ির দেখাশোনা, ভাড়া তোলা সব কিছুই দেখতে হয় তাকে। মাস শেষে বাড়ি ভাড়া তুলে প্রবাসীর ব্যাংক একাউন্টে জমা করে দেয়।
শখের বশে ঢাকায় এসে তার কাছেই উঠি। জানেন বাবুল ভাই! সেকি বাবুল ভাই কই? পেছনে তাকিয়ে দেখি খুব গোমড়া মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
হয়েছে তোমার?
কি? ও খাওয়া? এখনোতো শুরুই করিনি। কি ব্যাপার খাবার কই?
আমি তোমার খাওয়ার কথা বলিনি। বলেছি তোমার কাহিনী শেষ হয়েছে কি না। আর তুমি বলেছ খাবেনা তাই খাবার নিয়ে গেছি। এখন চল গুমাবে। নিষ্ঠুর স্বভাবের মতই কথাগুলো বললেন বাবুল ভাই। ¶ণে ¶ণে তার আচরণ বদলানো দেখে বিস্মিত হয়ে যাই। এখানকার পর্বশেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথেই আমার থাকতে হবে যদিও জানিনা সর্বশেষ কি জীবিত ফিরবো নাকি লাশটা গুম হয়ে যাবে। তাই তার সাথে কোনোরকম ঝামেলা করা যাবে না।
কিন্তু হাসুর জন্যেও মনটা কাঁদে। আজ রাতে আমি না ফিরলে সে পাগল হয়ে যাবে, সারারাত গেট খুলে বসে থাকবে আমার জন্য। কি করবো বুঝতে পারছি না। কি করে তার কাছে খবর পাঠাবো, ইচ্ছে করলেও আজ অথবা আর কখনো ফিরতে পারবো না। বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছে। মাথা নিচু করে চুল টেনে ধরি। হঠাৎ পিঠে হাত, মাথা তুলে দেখি বাবুল ভাই পেছনে বসে আছেন। আবেগে জড়িয়ে ধরি তাকে। বাবুল ভাই মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন।
তোমার কষ্ট আমি বুঝি কিন্তু কি করবো, আমার যে কিছুই করার নেই। আর তুমি ইচ্ছে করলেও এখান থেকে যেতে পারবে না। আর পালাতে গেলে আরো বেশি বিপদে পড়বে।
আমার বিপদের কথা চিন্তা করিনা বাবুল ভাই। আমি হাসুর জন্য চিন্তা করি, ও আমার জন্য আজ রাত কাটাবে গেটে বসে।
তুমি নিজের চিন্তা না করে হাসুর জন্য চিন্তা করছো? তুমিতো অদ্ভুত মানুষ? কি বলছ তুমি?
আচ্ছা বাবুল ভাই, এখানকার শেষটা কি হবে বলতে পারেন?
তিন.
চিন্তা না করে উপায় আছে? এখান থেকে ছাড়া ফেলে তার ওখানেই উঠতে হবে আমাকে, বলতে গেলে এ শহরে হাসুই আমার সব, হাসু ছাড়া আমি মূল্যহীন। কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে বাবুল ভাই। সে এক রহস্যময় হাসি। চার দেয়ালের মাঝে প্রতিধ্বনি হতে থাকে হাসির শব্দ। আর সে শব্দ থেকে যেন বেরিয়ে আসছে করুণ আর্তনাদ।
এভাবে হাসছেন কেন বাবুল ভাই? এবার যেন হাসির শব্দটা আরেকটু বেড়ে যায়! হাসতে হাসতে দুই চোখ থেকে অঝরে পানি পড়তে থাকে। এমন হাসি আর কখনো দেখিনি, মানুষ এভাবে হাসতে পারে! নিজে না দেখলে কখনো বিশ্বাস করতাম না। তা হলে কি বাবুল ভাইও আমার মতো! ভাবতেই বলে উঠলেন।
কেন! হাসু ছাড়া আর কেউ নেই তোমার?
থাকতে পারে হয়তো তার সাথে এখনো দেখা হয়নি।
তুমিতো অদ্ভুত মানুষ?
আপনি কিন্তু আমার চাইতে আরো অদ্ভুত! অদ্ভুত শুনতেই থমকে যান তিনি, খড়ের আগুনে পানি ঢেলে দেয়ার মতো। তার চুপসে যাওয়া দেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তার দিকে। তার চেহারায় ভেসে উঠে সরলতার প্রতিচ্ছবি। মনে হচ্ছে নিজের সরলতাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে এই অদ্ভুত আচরণটাকে আপন করে নিয়েছেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন।
কি যেন বলছিলে তুমি?
আপনি বড়ই অদ্ভুত! এবার হতাশার সুরেই বললেন।
তাই নাকি? বলেই উঠে দাঁড়ালেন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন।
চলো এবার ঘুমাবে। বলেই হাঁটা ধরলেন, আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। একটু আগে পরিষ্কার করা রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন। যেন অনেকদিন পর ঘুমাতে এসেছেন। বালিশে মাথা রেখে লাইট অফ করার কথা বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লেন।
আচ্ছা বাবুল ভাই! এখানকার শেষটা কি হবে বলতে পারেন? জবাবের অপে¶ায় বসে থাকি কিন্তু কোনো জবাব আসছে না, তাকিয়ে দেখি বাবুল ভাই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন! খাট থেকে নেমে দরজায় গিয়ে দাঁড়াই, আলোয় জলমল করছে পুরো বাড়ি কিন্তু সুনশান নীরবতা, এ যেন আলোকিত ভুতুড়ে বাড়ি। দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবছি পালিয়ে যাবো, ভাবতেই কে যেন বলে উঠলো, সেটা তুই পারবি না!
পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বাবুল ভাই আগের মতই শুয়ে আছে। বাবুল ভাই বলে আস্তে করে ডাক দিলাম, কোনো সাড়া শব্দ নেই, কাছে গিয়ে নাক ডাকার শব্দ পেলাম, বুঝতে বাকি নেই গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে আছেন বাবুল ভাই।
তাহলে কে কথা বললো? ভাবতেই গা শিউরে করে উঠে, কে যেন ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছে। দ্র“ত খাটের উপর উঠে বসি। আমরা দুজন ছাড়া আর কেউ আছে কি না তী¶্ন দৃষ্টিতে নজর রাখছি সে দিকে। দীর্ঘসময়ে সেরকম কাউকে ফেলাম না। হঠাৎ কাচ ভাঙার শব্দ অমনি পুরো বাড়ি অন্ধকার শিউরে উঠে পুরো শরীর। পুরো বাড়ি নীরব নিস্তব্ধ শুধু বাবুল ভাই ঘুমের ঘরে নাক ডাকার শব্দ। ধীরে ধীরে শরীরটা ভারী হয়ে আসছে যেন মাথার উপর ভারী বোজা চাপিয়ে দিচ্ছে কেউ। বাবুল ভাইকে ডাকবো কি না ভাবছি। ভাবতেই বাবুল ভাই ওপাশ থেকে এপাশে ফিরে আমার গায়ে হাত পড়তেই।
কে? বলে হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসে। মনে হচ্ছে ঘুমের ঘরে আমার কথা মনে নেই তার। তাই আস্তে করে বললাম।
আমি।
ও তুমি? এখানো ঘুমাওনি? ফ্যান বন্ধ করছো কেন?
আমি বন্ধ করিনি। বিদ্যুৎ চলে গেছে।
বিদ্যুৎ চলে গেছে মানে? এমনভাবে কথা বললেন মনে হচ্ছে এ বাড়িতে কখনো বিদ্যুৎ যায়নি।
এইতো একটু আগে কাচ ভাঙার শব্দের মতো হলো এর পরই পুরো বাড়ি অন্ধকার।
কি বলছো তুমি? কাচ ভাঙবে কোত্থেকে। খুব আশ্চার্যের সুরেই বললেন।
সে রকমই তো মনে হলো। এবার খাট থেকে নামার জন্য পা বাড়ালেন বাবুল ভাই, অমনি মাথার উপর ফ্যান ঘুরতে থাকে কিন্তু একটি লাইটও জ্বলেনি! লাইট জ্বলেনি কেন? আমিতো সুইচ বন্ধ করিনি। ভাবতেই প্রশ্ন করলেন বাবুল ভাই।
তুমি কি লাইটের সুইচ বন্ধ করেছ?
না।
তাহলে লাইট জ্বলছে না কেন?
আমি কিভাবে বলবো? একথা বলতেই আবারো ফ্যান বন্ধ হয়ে যায়। বাবুল ভাই খাট থেকে নেমে গেলেন, কোনদিকে গেলেন অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ ভ্যাপসা গরমের বাতাস, মনে হচ্ছে আগুনের হুল্কা এসে গায়ে পড়ছে। জ্বালাপোড়া করছে পুরো শরীর। ভয়ে গা চমচম করছে, তাই বাবুল ভাই বলে কয়েকবার ডাক দিলাম। বাবুল ভাইয়ের জবাব নেই, এদিকে প্রচণ্ড গরমে শরীরে যেন ফোঁসকা পড়ছে। আর কিছু¶ণ পরপর কেউ যেন মরুভূমির তপ্ত বালু ছিটিয়ে দিচ্ছে শরীরে, অসহ্য যন্ত্রণা! এর উপর নিকোষকালো অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছে না সামনে।
বাবুল ভাইয়েরও কোনো খবর নেই, কত¶ণ অন্ধ হয়ে বসে থাকা যায়, তাই আগুনের হুল্কা থেকে বাঁচতে খাট থেকে নিচে নামতে গিয়ে হোঁচট খেলাম, বিড়ালের মতো কিছু একটা পায়ের সাথে লেগে দেয় দৌড়!
এ আলিশান বাড়িতে বিড়াল আসবে কোত্থেকে! হয়তো বাবুল ভাই শখ করে পুষছে, নয়তো বাড়ির মালিকের আদরের পোষা বিড়াল! একথা বলে নিজের মনকে শান্ত করি। ঠিক তখনি দরজার কাছে কলাগাছ ভেঙে পড়ার মতো ধপাস করে কি যেন পড়লো ফ্লোরে।
কেঁপে উঠে ফ্লোর! মনে হচ্ছে খাটসহ কাঁপছে, এবার বুকের কাঁপনটাও বেড়ে যায়। ভয় নামের ভয়ংকর শব্দটি পাথর চাপা হয়ে বসে পুরো শরীরে। অসহ্য চাপে কণ্ঠভেদ করে বেরিয়ে আসে, মা’গো চিৎকার! সাথে দুই চোখ ফেটে বেরিয়ে আসে শ্রাবণের বারিধারায় হাউমাউ কান্না। এর আগে কখনো এত জোরে চিৎকার দিয়েছি কি না মনে পড়ছে না। আর কান্না কবে কেঁদেছি সেটা বের করতে হলে হয়তো তিন দিন বসে চিন্তা করতে হবে। এরপরও মনে পড়বে কি না তাও বলতে পারছি না। কিন্তু কে শুনবে আমার চিৎকার আর কান্না?
এবার বাবুল ভাই বলে জোরে ডাক দিলাম। কোনো সাড়া না পেয়ে সাহস করে খাট থেকে নেমে দরজার দিকে দিলাম দৌড়। দৌড় দিতেই হোঁচট খেয়ে পড়লাম, অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে দিতে ফ্লোরে মানুষের শরীরে। ভয়ে আঁতকে উঠি তবুও সাহস করে হাতড়িয়ে দেখতে থাকি! উদোম শরীর! কোনো নড়চড়া নেই নাক খুঁজে হাত দিয়ে দেখি নিঃশ্বাস আছে, অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
কি করবো চিন্তা করে কূল পাচ্ছি না। বাবুল ভাই নয়তো? তবুও বাবুল ভাই বলে ডাক দিলাম। এ সময় কে যেন পিঠে হাত দিল, বরফের মতো ঠাণ্ডা নিঃশ্বাসটাও যেন হিমালয় থেকে ছুটে আসা হিমেল হাওয়া।
কে? বলতেই হাতটা সরিয়ে নেয়। পেছন ফিরে তাকিয়ে দম বন্ধ হওয়ার অবস্থা! স্পাত মিলের লোহা গলানো আগুনের গোলার মতো জ্বলজ্বল করছে দুটি ফুটবল! যেন আগ্নেয়গিরির লাভা ছড়িয়ে পড়ছে! আমি ভুল দেখছি নাতো? চোখ কচলিয়ে আবারো তাকালাম। না ভুল দেখিনি, এখনো আগের মতো জ্বলছে।
বুঝতে বাকি নেই এটা দুষ্ট জিনের কাজ। বুকের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, মাথাটাও চক্কর দিয়ে উঠে। ঝিমধরে বসে থাকি অন্ধকারে। এ সময় কে যেন বলে উঠলো এখন ভয় ফেলে বিপদ আরো বাড়তে পারে তোমার, ভয়কে জয় করতে হবে।
তখন দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে আবারো বাবুল ভাই বলে ডাক দিলাম। আবারো পিঠে হাত! মুখ ঘুরিয়ে তাকাতেই বলে উঠলো।
ও এখন উঠবে না।
কেন?
সে উত্তর তুমি পাবে না।
তুমি কে?
আমি এখানকার পুরনো বাসিন্দা! আর তুমি এখানকার মেহমান তাই তোমার কোনো ভয় নেই।
পুরনো বাসিন্দা মানে?
হ্যাঁ এটা আমাদের আদিনিবাস।
তোমার পরিচয়?
আমার পরিচয় দিয়ে কি করবে তুমি?
আমি বলছিলাম তুমি জিন নাকি অন্য কিছু।
আমি জিন।
এখন কোথায় থাকো তুমি।
আশপাশেই থাকি।
ওকে এভাবে ফেলে দিয়েছ কেন?
ওটা ওর পাওনা ছিল।
কেমন ধরনের পাওনা?
দেখ, তুমি এখানকার মেহমান। এত কিছু জানার চেষ্টা করবে না।
আমি কিসের মেহমান, আমাকে তো ধরে আনা হয়েছে।
আমি জানি, তবুও তুমি আমার কাছে মেহমানের মতো। আমাদের সমাজে মেহমানদের কোনো ¶তি করার নিয়ম নেই। আর শুনো! ওকে ডেকে কোনো লাভ নেই আজ সারারাত ও এখানে পড়ে থাকবে।
জিনের কথা শুনে নিজের ভেতরে লুকানো চাপা আতংক কেটে যায়। জিন পরির গল্প কাহিনী লোকমুখে আর বইপত্রে পড়লেও আজ বাস্তবে সে জিন আমার সামনে, যদিও তার অবিকল চেহারা দেখতে পাচ্ছি না। জিনের মাধ্যমে অনেক গোপন বিষয় জানা যাবে ভেবে মনের ভেতরে পুলকিত ভাব জš§ নেয়। তাই স্বাভাবিকভাবে কথা বলার চেষ্টা করি।
তা হলে বাবুল ভাই কখন উঠবে?
আগামীকাল সন্ধ্যার আগে জেগে উঠার সম্ভাবনা কম।
কি বলছো তুমি?
আমি ঠিকই বলছি।
তাহলে আমার কি হবে?
তুমি আরো দুই দিন থাকতে হবে এখানে!
তার পর?
সেটা এখন বলতে পারবো না।
কেন? তোমরা তো ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারো।
না, এটা মিথ্যা, ভবিষ্যৎ একমাত্র আল্লাই বলতে পারে।
তাহলে অনেকেই যে, তোমাদের জিনদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছে।
তোমাদের মানব জাতির মধ্যে যারা চরম মিথ্যাবাদী এবং ধোঁকাবাজ তারাই এসব বলে এবং আমাদের জিনজাতির উপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।
তাহলে তুমি যে এইমাত্র বললে বাবুল ভাই আগামীকাল সন্ধ্যার আগে উঠবে না এবং আমাকে আরো দুই দিন এখানে থাকতে হবে। এটা কি ভবিষ্যৎ নয়?
না এটা ভবিষ্যৎ নয়।
তাহলে এটা কি?
এটা আমার জানা কথা, তোমার ব্যাপারে যা জেনেছি তা তোমাকে বলেছি।
আর বাবুল ভাইয়েরটা?
অনুমান করে বলছি।
আমারটা কার কাছ থেকে জেনেছ তুমি?
তুমি কি আমাকে জেরা করছো? নাকি সুযোগ পেয়ে মাথায় উঠেছ? মনে হচ্ছে বিরক্ত হচ্ছে আমার কথায়।
তাই নরম সুরে বললাম।
না মানে, তুমি তো বুঝতে পারছো আমার বিপদের কথা। তাই তোমার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করছি। ইচ্ছে করলে তুমি বলতে পারো। কাজ হয়েছে কথায়।
যে তোমাকে ধরিয়ে এনেছে তার কাছ থেকেই শুনেছি।
যদি কিছু মনে না করো তাহলে আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করবো।
ঠিক আছে বলো। এটাই কিন্তু শেষ।
আমাকে কেন ধরে এনেছে সেটা কি বলতে পারবে?
না সেটা বলতে পারবো না। বুঝতে পারছি সে বিরক্ত হচ্ছে এবার বিনয়ের সাথে বললাম।
জিন সাহেব আমার একটা উপকার করবে? সাহেব শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে।
এই ছেলে আমাকে সাহেব বললে কেন? ধমক শুনে আমি তো শেষ! আর বুঝি র¶া নেই। তবুও আস্তে করে বললাম।
আপনাদের মধ্যে সাহেব নেই!
ওসব সাহেব টায়েব আমাদের সমাজে নেই। আর কখনো এসব বাজে শব্দ বলবে না!
কি বলছে জিন! ‘সাহেব’ নাকি বাজে শব্দ, মনে মনে বলি আমাদের সমাজের হাইব্রিড সাহেবদের সামনে এমন কথা বললে রাতের আঁধারে নিশ্চিত গুম হয়ে যেতে হতো। আমার নিশ্চুপতা দেখে বললো।
শুনো ওইসব সাহেব টায়েব তোমাদের মানব সমাজে মানায়, কারণ যে সমাজে, চৌকিদার হওয়ার যোগ্যতা না থাকা ব্যক্তি দেশের মন্ত্রী হয়ে লম্বা কথা বলে সে সমাজে সব কিছুই সম্ভব! তাই আমরা ওইসব ঘৃণা করি। তাই আর কখনো ওই শব্দ বলবে না।
তোমার সাথে কি আর দেখা হবে?
হতেও তো পারে।
না হবে না।
কেন?
আমি মানুষ আর তুমি হলে জিন, তুমি আমাকে দেখতে পেলেও আমিতো তোমাকে দেখতে পাবো না। তা হলে কিভাবে দেখা হবে?
তোমার সাথে মাঝে মাঝে আমি নিজেই দেখা করবো।
আমার সাথে তুমি দেখা করবে কেন? শুনেছি জিনরা মানুষদের সাথে দেখা করে তাদের ¶তি করে, এমন কি মেরেও ফেলে। তুমি কি আমার সাথে সে জন্য দেখা করতে চাইছো?
না, তুমি খুব ভালো মানুষ। আর তুমি যে বলেছ আমরা ¶তি করি তা কিন্তু পুরোটা সত্য না, আমরা সবার ¶তি করি না।
তা হলে কার ¶তি করো?
যারা আমাদের ¶তি করে।
তোমাদেরকে তো দেখাই যায় না! তাহলে তোমাদের ¶তি কিভাবে করে মানুষ।
সে জবাব এখন তোমাকে দিতে পারবো না।
তাহলে কখন দিবে?
আরেকদিন যখন দেখা হবে, তখন এর জবাবটা দেব।
তুমি যে একটু আগে বললে আমি ভালো মানুষ সেটা তোমাকে কে বলেছে।
তোমার সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তুমি অন্য মানুষদের মতো নও।
শুনো আমরা মানুষরা সবসময়ই ভালো।
না সব মানুষরা ভালো নয়! তোমাদের কিছু মানুষ হিংস্র জানোয়ারের চাইতেও খারাপ, স্বার্থের জন্য নিজের জš§দাতা মা-বাবাকে পর্যন্ত মেরে পেলে।
আর তোমরা জিনেরা কি করো?
আমাদের সমাজেও আছে কিন্তু তোমাদের মতো এত খারাপ নেই।
কেন ইবলিশ তো তোমাদের জাতি, সে তো দুনিয়ার সব চাইতে খারাপ। ইবলিশের কথা শুনে চুপ হয়ে যায় জিনটি। অনে¶ণ কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে বললাম।
তুমি কি চলে গেছ?
না।
তাহলে কথা বলছো না কেন?
তুমি ঠিকই বলেছ, ওই এক ইবলিশের কারণেই আমরা অভিশপ্ত, পৃথিবীর প্রথম সৃষ্টিজীব হয়েও আমরা ওই একজনের কারণে অপমাণিত হয়ে আছি। তার সহজ স্বীকারোক্তি আমাকে বিস্মিত করে দেয়।
তাহলে তুমি স্বীকার করছো তোমাদের চাইতে আমরাই বেশি ভালো।
দেখ, তুমি তোমার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আমাকে ছোট করার চেষ্টা করছো। সত্যি তুমি অসাধারণ!
না আমি আমার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য তোমাকে ছোট করছি না। তুমি কি জানো? আমরা সকল সৃষ্টিজীবের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব যা মহান স্রষ্টাই ঘোষণা করেছেন।
জানি। সে তোমরাই সামান্য লোভের কারণে নিজেদের মান সম্মান জমিনের সাথে মিশিয়ে দিতে পারো। ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে মায়ের নিরাপদ কোলে সন্তানের জীবন হরণ করতে পারো! বিকৃতবাসনা পূরণে দুই জন পুরুষ একসাথ হতে পারো! এজন্য স্রষ্টা বলেছেন তোমাদের মধ্যে এমনো আছে যারা চার পায়ের জন্তুর চাইতেও নিকৃষ্ট। তোমার সাথে অনেক কথা হয়ে গেছে আমাকে যেতে হবে।
এ¶ণি চলে যাবে?
কেন? আর কিছু বলবে?
আমার একটু উপকার করবে?
কি করতে পারি তোমার জন্য?
আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে?
(চলবে)
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ইঞ্জিঃ জিএম আহসান উল্লাহ।
আইন উপদেষ্টাঃ অ্যাডভোকেট বাহা উদ্দিন বাহার।
ইমেলঃ news@sokolerkhabor.com
বার্তা ও বাণিজ্যিকঃ ০১৭১৫-২৫২৬০৮ , ০১৬৩৮২৬০৯৩৪
অফিসঃ ৬০নং চামেলীবাগ, শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
কারিগরী সহায়তায়ঃ বিডি আইটি হোম-০১৭০০৬০৩০৪০,লাকসাম,কুমিল্লা।