তীব্র গরমে পুড়ছে দেশ। কখনো তীব্র আবার কখনো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলের ওপর দিয়ে। তীব্র গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। চলতি মাসে ২৪ দিনের মতো তাপপ্রবাহ বইছে, যা ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে শুক্রবার। এ অবস্থা এপ্রিল মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক জানান, ১৯৪৮ সাল থেকে এক বছরে তাপপ্রবাহের দিনের রেকর্ড ভেঙেছে। গত ৭৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ বইছে বাংলাদেশে। টানা অন্তত দুদিন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদফতর। ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগে ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এরপর ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগটির তাপমাত্রা ৩৬-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। পরবর্তীকালে ঢাকা, খুলনা ও রংপুর বিভাগেও তাপমাত্রা বাড়ে এবং দুদিন তা অব্যাহত থাকে। এদিকে, গত ৮ এপ্রিল কক্সবাজার ও সীতাকুণ্ডে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। তবে ৯ ও ১০ এপ্রিল সারাদেশে তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ছিল। এরপর ১১ এপ্রিল থেকে উষ্ণতা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। তাপপ্রবাহের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। গরমে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। জ্বর-সর্দি আর ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভিড় বাড়ছে শিশুদের। গত কয়েক দিনে শিশু হাসপাতালে ভিড় বেড়েছে বেশ।
এদিকে এপ্রিলজুড়ে তাপপ্রবাহ থাকলেও মে মাসের শুরু থেকে গরম কমার সংকেত দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এপ্রিলজুড়েই থাকবে তাপপ্রবাহ। তবে মে মাসের শুরুতেই সারাদেশে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরপরই গরম কমে আসবে। এদিকে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ ও জলবায়ুসংক্রান্ত রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে উষ্ণতার মাত্রা ও এর স্থায়িত্ব বাড়ছে। রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি।
সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি
চুয়াডাঙ্গায় চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জেলার মানুষ। গরমে পাল্লা দিয়ে জেলাজুড়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বারবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় গরমে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে জনজীবন অস্থির হয়ে পড়ছে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১১ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এটিই। জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ আরও কিছু দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগামী তিন দিন আরও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। ৪৩ থেকে ৪৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে তাপমাত্রা। সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেন তিনি।
এদিকে তীব্র গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চুয়াডাঙ্গার জনজীবন। সব থেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরা। গরমে এসি ও ফ্যানের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বিদ্যুতের ব্যবহারও। ফলে বেড়েছে লোডশেডিং। দিনে বাসায় থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাতে মশার যন্ত্রণা। গরমের সঙ্গে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় সারা রাত নির্ঘুম কাটাতে হচ্ছে। অপরদিকে জেলা সদর হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া ও শিশু রোগীর সংখ্যা। ওয়ার্ডের মেঝেতে রেখে চলছে চিকিৎসা। এছাড়া বহির্বিভাগেও রয়েছে রোগীদের চাপ। প্রতিদিন গড়ে গরমজনিত কারণে ৭০০-৮০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহা: আতাউর রহমান। গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন সে তুলনায় না বাড়ায় লোডশেডিং বেড়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির চুয়াডাঙ্গা জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আবু হাসান।
তিনি বলেন, জেলায় গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। পল্লী বিদ্যুতের আওয়াধীন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সেখানে আমরা পাচ্ছি ৯০-৯২ মেগাওয়াট। আমাদের মূল গ্রিডের যে ধারণক্ষমতা, সেখানেও টানতে পারছে না। ঘাটতি পূরণ করতেই লোডশেডিং চলছে। চুয়াডাঙ্গা সদরের পদ্মবিলা ইউনিয়নের বাসিন্দা সাবিক আল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন রাতে কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়। চরম দুর্ভোগে আছি আমরা। রাতেও ঘুম হয় না। সদরের মাখালডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাকিম বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। বাড়িতে শিশুরা গরমে অস্থির হয়ে পড়ছে। বাইরে বের হলে মনে হচ্ছে রোদের তাপে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তার ওপর রাতের লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।