আবু ইউসুফ
কয়েকদিনের চলমান অতি ভারী বৃষ্টি, ভারতের আকস্মিক বাঁধ ছেড়ে দেয়ায় আগ্রাসী পানির তোড়ের কারণে ভয়াবহ বন্যায় ডুবে গেছে কুমিল্লা, মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৯০ ভাগ এলাকা। উপজেলার বাইশগাঁও, হাসনাবাদ, সরসপুর, নাথেরপেটুয়া, বিপলাসার, উত্তর হাওলা, খিলা, মৈশাতুয়া, ঝলম দক্ষিণ, ঝলম উত্তর, লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোর বেশির ভাগ ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এখানকার অসহায় মানুষগুলো ঘর ছেড়ে ছুটছে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সাথে নিয়ে যাচ্ছে গবাদিপশুসহ হাস মুরগি। ইতোমধ্যে কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। স্মরণকালের ভয়াবহ বানের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে সবকিছু।
উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের সাহায্যে নানা পদক্ষেপ নিলেও উপজেলাজুড় বইছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। বন্যার পানিতে উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ আটকা পড়েছেন নিজ বাড়িতে। গতকাল বিকেল থেকে বৃষ্টি বন্ধ হলেও হু হু করে বাড়ছে পানি। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অথৈ পানি মাড়িয়ে যেতে পারছেন না আশ্রয় কেন্দ্রে। পানিতে ডুবে যাওয়া চুলায় আগুন জ্বালাতে না পারার কারণে প্রকোট আকারে খাদ্য সংকটও দেখা দিয়েছে। নারী, শিশু আর বয়স্কদের নিয়ে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পরিবারগুলো। বন্যার কারণে উপজেলাজুড়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ইতোমধ্যে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে, মনোহরগঞ্জ প্রেসক্লাব, বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী,ইসলামী ছাত্র শিবির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, মনোহরগঞ্জ মানব কল্যান ট্রাস্ট, হাসনাবাদ ইউনিয়ন ক্যান্সার ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিন্তু রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ার বিঘ্ন ঘটছে উদ্ধার তৎপরতায়। ব্যক্তিগতভাবেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন অনেকেই।
গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জানা যায় গতকাল উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল আলম বাচ্চু, হাসান পাটওয়ারীসহ যুবদলের নেতৃবৃন্দ বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোহরগঞ্জ উপজেলার আমির হাফেজ নুরনবী, হামিদুর রহমান সোহাগ, জয়নাল আবেদীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন স্থান ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে খাবার বিতরণ করেছেন। যা চলমান থাকবে।
বন্যার পানিতে আটকেপড়া অনেকে উদ্ধার অভিযানের আহ্বান জানিয়ে স্যোসাল মিডিয়ায় লিখছেন পানিতে বাড়ি ঘর ডুবে যাচ্ছে। জরুরি উদ্ধার অভিযান প্রয়োজন।’
অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমাদের চারপাশ ডুবে গেছে। এই বৃষ্টি চলমান থাকলে সব ডুবে যাবে।’
ভয়াবহ এই বন্যায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ হয়ে গেছে যার ফলে এলাকার বাহিরে থাকা লোকজন তাদের পরিবার আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। পরিবার এবং এলাকার খোঁজ খবর নিতে না পারায় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় পড়েছেন তারা। এছাড়া ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির নিচে তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তা ঘাট। এনিয়ে অনেকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা নিয়ে বলছেন ‘বাড়ি ও এলাকার কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না! কারো কাছে সবশেষ তথ্য থাকলে জানান প্লিজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ঘর বাড়ি ডুবে যাওয়ার ফলে উপজেলার অনেকের ঘরে খাবার নাই, বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। জরুরিভাবে তাদের উদ্ধার করতে হবে যে কোনোভাবেই। অনেকেই বলেছেন পানি যেভাবে বাড়ছে উদ্ধারের জন্য নৌকা বা স্পিড বোট না পেলে অনেকেই পানির স্রোত এবং পানির উচ্চতার কারণে গবাদিপশু মারা যেতে পারে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা বলেন বন্যা পরিস্থিতি কারণে ইতোমধ্যে বসতঘর ডুবে যাওয়া লোকজন বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন, আমরা তাদের মাঝে শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরণ টেবলেটসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ করে যাচ্ছি।
উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ অধিদপ্তরের উপ প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেসব আশ্রয় কেন্দ্রে কিছু পরিবার তাদের গবাদিপশু হাস মুরগি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তিনি ঠিক কত পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি। তিনি বলেন আমরা আমাদের সাধ্যনুযায়ী উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
মনোহরগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক মোঃ আবু ইউসুফ বলেন ভয়াবহ এই দুর্যোগে দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবাইকে অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।
উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ নুরনবী বলেন বন্যায় আটকেপড়া লোকজনকে উদ্ধার এবং তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য মাঠে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামি ছাত্র শিবিরের সকল জনশক্তি। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনো খাবারসহ ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছি।