ব্রেকফেল করা গাড়ির মতোই ছুটছে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার দর। বাজার দরের ব্রেকফেল গাড়ির চাপায় পড়ে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাজার নিয়ন্ত্রণে হাঁকডাক দেখা গেলেও তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বাজার মনিটরিংয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় নতুন করে বেড়েছে সব পণ্যের দাম। এক কথায়, বাজার সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এ যেন মহাসড়কে ব্রেকফেল গাড়ি। ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিলো ৪৫ ঠাকা থেকে ৪৮ টাকা। ঢাকায় ডিমের বড় দুটি পাইকারি বাজার আছে। এর একটি কারওয়ান বাজারসংলগ্ন তেজগাঁও রেলস্টেশন পাইকারি ডিমের বাজার। অন্যটি পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজার। এই দুই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার পাইকারিতে ১০০ বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। যদিও প্রান্তিক খামারিরা ডিমের দাম কমা বাড়া নিয়ে তেজগাঁও আড়তমালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দেন আড়তমালিকরা। যে সময় সারাদেশে ডিম হিমাগারে মজুত হয়েছে। এখন দাম বাড়িয়ে তারা মুনাফা করছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সারাদেশে মেসেজের মাধ্যমে তারা (তেজগাঁও আড়তমালিকরা) ডিমের দাম নির্ধারণ করে। হুট করে তারা দাম কমিয়ে দিয়ে খামারিদের থেকে ডিম নিয়ে হিমাগারে সংরক্ষণ করে, এরপর আবার দাম বাড়িয়ে এ সিন্ডিকেট মুনাফা লুটছে।
তিনি বলেন, ঢাকার আড়তগুলোতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ ডিম বিক্রি হলেও তারা সারাদেশে বিক্রিত ৪ কোটি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে। প্রতিদিন তারা মেসেজ দিয়ে বাজারদর জানিয়ে দেয় সারাদেশে থাকা আড়তদারদের। তারা এখন ডিমের বাজারে সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট।
শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে বিভিন্ন সবজির। বিশেষ করে কাঁচা মরিচের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকা হয়েছে। এছাড়া আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি, চিনি, চাল, ডাল, ডিম ও মাছ-মাংস। বছরের এই সময় আলু সাধারণত সস্তা থাকে। সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের মে মাসের এ সময়ের বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলুর কেজি সর্বনিম্ন ২২ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। এবার সেই আলুর দাম ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। স্থানভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৫০-৬০ টাকা। পেঁপে ৮০-৯০ টাকা, বেগুনও ১২০ টাকা। করলা ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও মান ও জাতভেদে পটল ৬০-৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। স্থান ও মানভেদে কাঁচামরিচ ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, চিচিঙ্গা ৮০-১০০ টাকা, ঝিঙা ৬০-৭০ টাকা, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, কচুর মুখী মানভেদে ১০০-১২০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, শসা ৫০-৭০ টাকা ও কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা হালি। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে দেশি রসুন ২২০-২৪০ টাকা এবং আদা আগের বাড়তি দামেই ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির বাজার ছাড়াও বাড়তি উত্তাপ দেখা গেছে সব ধরনের মাছ-মুরগিতেও। অন্যান্য পণ্যও চড়াদামে আটকে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট বাড়িয়েছে। যদিও গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকারের কথা বলেছিল। নতুন মন্ত্রিসভা আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আশাবাদের কথা শুনিয়েছিল। তবে চিত্র এখন যা, সব মিলিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সুখবর নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ ইঞ্জিঃ জিএম আহসান উল্লাহ।
আইন উপদেষ্টাঃ অ্যাডভোকেট বাহা উদ্দিন বাহার।
ইমেলঃ news@sokolerkhabor.com
বার্তা ও বাণিজ্যিকঃ ০১৭১৫-২৫২৬০৮ , ০১৬৩৮২৬০৯৩৪
অফিসঃ ৬০নং চামেলীবাগ, শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
কারিগরী সহায়তায়ঃ বিডি আইটি হোম-০১৭০০৬০৩০৪০,লাকসাম,কুমিল্লা।