জিএম আহসান উল্লাহ
কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় উজান থেকে ধেয়ে আসা পানির চাপ বাড়তে থাকার পাশাপাশি অনবরত বৃষ্টির ফলে মনোহরগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের মধ্যেই বন্যার পানি বেড়েছে। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সরকারি–বেসরকারি কোনো ত্রাণই এখন পর্যন্ত পৌঁছায়নি। ফলে এলাকার বন্যার্ত মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজালা রানী চাকমা জানান,
উপজেলার সবকয়টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত। এসব এলাকার ৬০ টির অধিক আশ্রয়কেন্দ্রে এরই মধ্যে ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যায় পানিবন্দী হয়ে আছেন উপজেলার ৩ লক্ষ মানুষ।
বন্যার্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ১১ টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে আছে। সড়কগুলো তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বন্যার পানির কারণে গোটা উপজেলার বাসিন্দারাই পানিবন্দী অবস্থায় নিদারুণ কষ্টে দিন যাপন করছেন। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যার্ত মানুষের ভিড়।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যার্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার যেসব সড়কে তুলনামূলক বন্যার পানি কম ওই সব এলাকার নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে এবং বাসাবাড়ির লোকজন কমবেশি সরকারি–বেসরকারি ত্রাণ পাচ্ছেন। কিন্তু দুরবর্তী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দা সহায়তা পাননি। বন্যার পানি বেশি হওয়ায় তাঁদের কাছে কেউই ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন না।
উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. মিজানুর রহমান বলেন, পুরো এলাকা হাঁটু থেকে কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে। গতকাল রাতের বৃষ্টিতে পানি আরও বেড়েছে। মনোহরগঞ্জ-হাসনাবাদ সড়কের ওপর হাঁটুসমান পানি কোথায়ও কোথায়ও আরো বেশি। ব্যক্তিগত ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে কিছু পরিবারকে ত্রাণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এলাকায় অনেক পরিবার রয়েছে, যারা চার-পাঁচ দিন ধরে সামান্য শুকনা খাবার খেয়ে আছেন। কেউ কেউ আছেন না খেয়ে।
উপজেলার সরসপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, তাঁদের বাড়ির কাছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাশের একটি মাদ্রাসায় প্রায় ৫০০ বন্যার্ত মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন তাঁরা। এত দিন চাঁদা তুলে তাঁদের দুই বেলা খাবার দিয়েছেন। আর খাবার দেওয়ার মতো টাকাও তাঁদের কাছে নেই। অনেক বাড়ির বাসিন্দা এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। কোথায়ও যাওয়ার মতো জায়গা নেই তাঁদের। তাই ওই এলাকাতে দ্রুত ত্রাণসামগ্রীর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।