কঠোর নিয়মে বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি বাহিনী পরিচালিত হলেও রাজধানীর দক্ষিণ জোন ব্যতিক্রম। এখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতি অমান্য করে নিজেদের মন গড়া আইনেই চলছে দক্ষিণ জোনের আনসার বাহিনী।
বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি বাহিনীকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে আনসার ব্যাটালিয়ন, বিশেষ আনসার ও অঙ্গীভুত আনসার । সেগুলোকে আইন অনুযায়ী পরিচালনার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব,পশ্চিম ও প্রশাসনসহ পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর দক্ষিণ ও পশ্চিম জোনের আওতাধীন কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল, পাসপোর্ট ও বি আর টিএ অফিসে আনসার কমান্ডার( পিসি) সহকারি আনসার কমান্ডার (এপিসি) ও আনসার সদস্যদের এক প্রতিষ্ঠান হতে অন্য প্রতিষ্ঠানে বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জোন কমান্ডার ও থানা অফিসারগন।বর্তমানে রাজধানীর যেকোনো সরকারি হাসপাতালে বদলি হয়ে যেতে চাইলে একজন আনসার কমান্ডার (পিসি)কে নগদ ৪ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। পাসপোর্ট অফিসে যেতে চাইলে ৫ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। বিআরটিএ অফিসে যেতে চাইলে ৪ থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। একজন সহকারি আনসার কমান্ডার (এপিসি)কে এগুলোর মধ্যে যেকোনো জায়গাতে যেতে চাইলেই ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। একজন সাধারণ আনসার সদস্য এগুলোর যে কোন জায়গায় যেতে চাইলে ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আনসার কমান্ডার ‘সাপ্তাহিক মানিলাইন ‘কে জানায়, রাজধানীর দক্ষিণ ও পশ্চিম জোনে আনসার বাহিনীর দেওয়া আইন তেমন কার্যকর হয় না। যেমন- মিরপুর বিআরটিএ অফিসের সাবেক আনসার কমান্ডার (পিসি)কাঞ্চন বদলি নিয়েছিলেন ৪ লক্ষ টাকা এবং (এপিসি)শহিদুল শিশু হাসপাতাল থেকে মিরপুর বিআরটিএ অফিসে বদলি হয়েছিলেন ৪ লক্ষ টাকায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে? ৫/৭ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে হাসপাতাল, পাসপোর্ট ও বিআরটিএ অফিসে বদলি হয়ে আসার পর সে বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী ৬ মাস থাকতে পারবে এবং এর মধ্যেই যেভাবে হোক তার আসল টাকা তো উঠাতেই হবে। এজন্যই এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোতে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের নিকট থেকে ছুটি দিয়ে টাকা নেওয়াসহ ডিউটি পোস্ট বিক্রয় করে সাপ্তাহিক বা মাসিক অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে হয়। বর্তমানে বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী কোন কমান্ডার অথবা সদস্য কোন প্রতিষ্ঠানে ছয় মাসের বেশি থাকতে পারবে না।কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে আবার কোন নিয়মই কার্যকর হয় না। কেননা, নিউরোসাইন্স হাসপাতালের আনসার কমান্ডার (পিসি)আতাউর রহমান একই হাসপাতালে ১বছর ৩ মাস যাবৎ ডিউটি করছেন।ঢাকা মেডিকেলে অনেক আনসার সদস্য এক বছর, দুই বছরের উপরে ও ডিউটি করছে। তাছাড়াও গত জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসার কমান্ডার (পিসি)মোঃ আব্দুল জলিলকে শেখ হাসিনা পুরাতন বার্নে বদলি করা হয় যেখানে সদস্য ছিল ১৭ জন এবং আনসার কমান্ডার মোসলেমকে শেখ হাসিনা পুরাতন বার্ন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয় যেখানে আনসার সদস্য আছে ৪০৫ জন। আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আনসার কমান্ডার উজ্জ্বলকে দেওয়া হয়েছে সাইন্স ল্যাব বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)এর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে যেখানে আনসার সদস্য ছিল ৩৩ জন এবং আনসার কমান্ডার (পিসি)মিজানকে ৪ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে যেখানে আনসার সদস্য আছে ৩৮২ জন। তারা আরো জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে ৫ লক্ষ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে ৬ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছেন থানা অফিসার সহ অন্যান্যরা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায় , চলতি ঈদ- উল ফিতর উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসার সদস্যদের নিকট থেকে ২০০০ টাকা করে ঘুষ নিয়ে ১৪২ জন আনসার সদস্যকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সর্বমোট আনসার সদস্য সংখ্যা ৪০৫ জন। সে হিসেবে ২০% ছুটি দিলে সর্বমোট ৮১ জন ছুটিতে যাওয়ার কথা। এ বিষয়ে সহকারী আনসার কমান্ডার সাজ্জাতের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান ১০১জন ছুটিতে আছে।আনসার কমান্ডার (পিসি)মোসলেমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ছুটি দেওয়া সদস্য সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি সঠিক উত্তর দিতে পারেন নাই। এমনকি থানা অফিসার মোঃ জুয়েল এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ছুটিতে যাওয়া আনসার সদস্য সংখ্যা জানতে চাইলে তিনি ৮৫ জন সদস্যকে ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে জানান।
বর্তমানে বিট বাণিজ্য চলছে –
অর্থোপেডিক হাসপাতালের ডাক্তার কক্ষঃ তিন শিফটে ৫ হাজার করে ১৫ হাজার টাকা সপ্তাহে, ER-OT- তিন শিপ্টে ১০ হাজার করে ৩০ হাজার টাকা সপ্তাহে, বহির্বিভাগে এ শিপ্টে ডিউটি করে ৪ জন ২ হাজার করে ৮ হাজার টাকা সপ্তাহে, এক্সরে এ শিপ্ট ১৫ শত টাকা সপ্তাহে। নতুন ভবনের তৃতীয় তলা এ শিপ্ট ৫০০০ টাকা সপ্তাহে। নতুন ভবনের চতুর্থ তলা এ শিপ্ট ৫ হাজার টাকা ও বি শিপ্ট ৩ হাজার টাকা সপ্তাহে।এমনকি ফার্মেসি থেকেও সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন আনসার কমান্ডার (পিসি)আব্দুর রউফ।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঃ স্কয়ার,অফসোনিন,বেক্সিমকো,ড্রাগস ইন্টারন্যাশনাল, রেনেটাসহ ২২ থেকে ২৫ টি কোম্পানি থেকে প্রতিমাসে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন আনসার কমান্ডার (পিসি) মোসলেম । ক্যান্সার ভবন ও বহির্বিভাগের নীচতলা থেকে সাপ্তাহিক বিট। এক্সরে থেকে সাপ্তাহিক বিট নেন।
আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের আনসার কমান্ডার (পিসি) মুক্তার মিয়া পাসপোর্ট ডেলিভারি শাখা থেকে সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা সহ অফিসের ভিতরের যেগুলো ডিউটি পোস্ট আছে সবার কাছ থেকেই সপ্তাহে ৫ ও ৮ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন বলে ও জানা যায় ।তাছাড়াও সিভিল পোশাকে ৫/৬ জন আনসার সদস্য আছে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যাদের নিকট থেকে প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন আনসার কমান্ডার মুক্তার মিয়া। এমনকি রেশনের চাউল ও গমের টাকা কম দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণের জোন কমান্ডার মোস্তাক সাহেবের বড় ভাই মুক্তার মিয়ার বন্ধু হওয়াতে এখনো সেখানেই বহাল রয়েছেন। নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন আনসার সদস্য জানায়, সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে আনসার কমান্ডার মুক্তার মিয়া প্রত্যেকটা পোষ্ট থেকেই ঘুষের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তাছাড়াও জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে চলছে রমরমা বিট বাণিজ্য।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ঢাকা পশ্চিম জোন কমান্ডার মোঃ আম্মার হোসেন এর সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ঢাকা দক্ষিণের জোন কমান্ডার মো: মোস্তাক আহমেদ এর সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে জানা সাংবাদিকদের কাজ না।