সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের লোক

মহিন উদ্দিনের গ্রেপ্তার চায় সাধারণ মানুষ

  • আবু ইউসুফ
  • আপডেট এর সময় ০৯:৫২:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ১৬০ কত জন দেখেছেন
খবরটি শেয়ার করুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আগুনে পুড়িয়ে ছাত্র হত্যার অভিযোগে ঢাকা ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী তাজুলের বিশেষ বাহিনীর সদস্য কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের বিনা ভোটের চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। মামলা সূত্রে জানা যায় গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুর রোডে হোটেল চিলিস এর সামনে মৃত জাকির হোসেনের ছেলে মোঃ শামীম ১৩ নামে এক কিশোরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর কিশোর শামীমের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় শেখ হাসিনা সহ ১২৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিশোর শামীমের মা জাহানারা বেগম দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
কে এই মহিন উদ্দিন?
জানা যায় লাকসাম মনোহরগঞ্জে তাজু মতের বিরোধী আর বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন চালাতে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন বিশেষ এক সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রায় ৩শ জনের এই বিশেষ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য ছিলো হিংস্র প্রকৃতির। দখল, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ আর বিরোধী মতের দমনে ছিলো হায়েনার মতো। মন্ত্রীর লোক হওয়ায় শত অপরাধেও ওদের টিকিটি ছুঁতে পারেনি প্রশাসন। তাজুলের সেই আগ্রাসী বাহিনীর একজন ছিলো মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামের মহিন উদ্দিন। যার ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ ছিলো ভয় আর আতঙ্কে। দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিলো রুটিনমাফিক। তার ভয়ে এলাকার মানুষ যখন তটস্থ তখন তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি দিতে তাজুল ইসলাম তাকে বিগত ইউপি নির্বাচনে বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে আরো অনুগত করে নেন। মহিন উদ্দিন বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। কাবিখা, টিআর, এলজিএসপি, বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাটের মাধ্যমে অল্প কয়দিনেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। এছাড়া শালিস দরবারের নামে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদকে।
স্থানীয় নির্যাতিত সাধারণ মানুষ বলেন এমন কোনো অপরাধ নেই যা মহিউদ্দিন করেনি। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করলেও মন্ত্রী তাজুল ইসলামের লোক হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন উল্টো নিহতের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করেছে সে। জানা যায় ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মড়হ গ্ৰামে জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের সময় বাধা প্রদান করায় অজিউল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষককে তার বসত বাড়িতে ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে রয়েছে মহিন উদ্দীন এবং তার সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, মড়হ গ্রামের একটি সড়কের সম্প্রসারণের নামে কৃষক অজিউল্লার জমির উপর দিয়ে চেয়ারম্যান মহিন উদ্দীন জোরপূর্বক রাস্তার কাজ শুরু করলে অজিউল্লাহ কাজে বাধা দিলে লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিন চৌধুরী তার দলবল নিয়ে অজিউল্লার বাড়িতে ঢুকে তাকে বেদম মারধর করেন। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
হত্যার পর নিহত অজিউল্লার স্ত্রী বাদী হয়ে মহিউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তখনকার পুলিশ প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় লক্ষণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলীর ২.৭৮ একরের মাছ চাষের পুকুর দখল করে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ লুট কর নিয়ে যায় এবং নিজেই মাচ চাষ করে। এছাড়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে লক্ষণপুর বাজার পুকুরের ৪০ শতাংশ জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সেটি ভরাট করে দোকানঘর তুলে বানঘর গ্রামের জাহাঙ্গীর ও আখতার নামে দুজন প্রবাসীর নিকট প্রায় ১৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন মহিন উদ্দিন।
এছাড়াও বিএনপি জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা চালিয়ে এলাকাছাড়া করে তাদের। লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দাবি খুনি মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মহিন উদ্দিন পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি সে আবারও এলাকায় ফিরে এসেছে। তার ফিরে আসার সংবাদে আতংকে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন খুনি সন্ত্রাসী মহিন উদ্দিনের বাড়িতে প্রচুর অস্ত্র থাকতে পারে কারণ সে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতো, এমন একজন সন্ত্রাসী কিভাবে এলাকায় আসলো কারা তাকে নিয়ে আসলো তদন্ত হওয়া দরকার। স্থানীয় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করে বলেন সন্ত্রাসী মহিন উদ্দিনের হাতে আমাদের রক্ত লেগে আছে, তাকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে তাদেরকেও ছাড়া হবেনা। তারা মহিন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।

ট্যাগঃ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের লোক

মহিন উদ্দিনের গ্রেপ্তার চায় সাধারণ মানুষ

আপডেট এর সময় ০৯:৫২:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
খবরটি শেয়ার করুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আগুনে পুড়িয়ে ছাত্র হত্যার অভিযোগে ঢাকা ধানমন্ডি থানায় হত্যা মামলা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী তাজুলের বিশেষ বাহিনীর সদস্য কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের বিনা ভোটের চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে। মামলা সূত্রে জানা যায় গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর মিরপুর রোডে হোটেল চিলিস এর সামনে মৃত জাকির হোসেনের ছেলে মোঃ শামীম ১৩ নামে এক কিশোরকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গত ৩ অক্টোবর কিশোর শামীমের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় শেখ হাসিনা সহ ১২৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিশোর শামীমের মা জাহানারা বেগম দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
কে এই মহিন উদ্দিন?
জানা যায় লাকসাম মনোহরগঞ্জে তাজু মতের বিরোধী আর বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন চালাতে সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গড়ে তোলেন বিশেষ এক সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রায় ৩শ জনের এই বিশেষ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য ছিলো হিংস্র প্রকৃতির। দখল, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ আর বিরোধী মতের দমনে ছিলো হায়েনার মতো। মন্ত্রীর লোক হওয়ায় শত অপরাধেও ওদের টিকিটি ছুঁতে পারেনি প্রশাসন। তাজুলের সেই আগ্রাসী বাহিনীর একজন ছিলো মনোহরগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মণপুর গ্রামের মহিন উদ্দিন। যার ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ ছিলো ভয় আর আতঙ্কে। দখল, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছিলো রুটিনমাফিক। তার ভয়ে এলাকার মানুষ যখন তটস্থ তখন তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি দিতে তাজুল ইসলাম তাকে বিগত ইউপি নির্বাচনে বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে আরো অনুগত করে নেন। মহিন উদ্দিন বিনাভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। কাবিখা, টিআর, এলজিএসপি, বয়স্ক, বিধবা ভাতাসহ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লুটপাটের মাধ্যমে অল্প কয়দিনেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। এছাড়া শালিস দরবারের নামে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদকে।
স্থানীয় নির্যাতিত সাধারণ মানুষ বলেন এমন কোনো অপরাধ নেই যা মহিউদ্দিন করেনি। প্রকাশ্য দিবালোকে একজন মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করলেও মন্ত্রী তাজুল ইসলামের লোক হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন উল্টো নিহতের পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করেছে সে। জানা যায় ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মড়হ গ্ৰামে জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের সময় বাধা প্রদান করায় অজিউল্লাহ (৫০) নামে এক কৃষককে তার বসত বাড়িতে ঢুকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে রয়েছে মহিন উদ্দীন এবং তার সন্ত্রাসী দলের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, মড়হ গ্রামের একটি সড়কের সম্প্রসারণের নামে কৃষক অজিউল্লার জমির উপর দিয়ে চেয়ারম্যান মহিন উদ্দীন জোরপূর্বক রাস্তার কাজ শুরু করলে অজিউল্লাহ কাজে বাধা দিলে লক্ষণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিন উদ্দিন চৌধুরী তার দলবল নিয়ে অজিউল্লার বাড়িতে ঢুকে তাকে বেদম মারধর করেন। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি।
হত্যার পর নিহত অজিউল্লার স্ত্রী বাদী হয়ে মহিউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি তখনকার পুলিশ প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায় লক্ষণপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহম্মদ আলীর ২.৭৮ একরের মাছ চাষের পুকুর দখল করে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ লুট কর নিয়ে যায় এবং নিজেই মাচ চাষ করে। এছাড়া ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে লক্ষণপুর বাজার পুকুরের ৪০ শতাংশ জায়গা অবৈধভাবে দখলে নিয়ে সেটি ভরাট করে দোকানঘর তুলে বানঘর গ্রামের জাহাঙ্গীর ও আখতার নামে দুজন প্রবাসীর নিকট প্রায় ১৩ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন মহিন উদ্দিন।
এছাড়াও বিএনপি জামায়াতের অসংখ্য নেতাকর্মীদের উপর হামলা মামলা চালিয়ে এলাকাছাড়া করে তাদের। লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দাবি খুনি মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে। ৫ আগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মহিন উদ্দিন পালিয়ে গেলেও সম্প্রতি সে আবারও এলাকায় ফিরে এসেছে। তার ফিরে আসার সংবাদে আতংকে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন খুনি সন্ত্রাসী মহিন উদ্দিনের বাড়িতে প্রচুর অস্ত্র থাকতে পারে কারণ সে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করতো, এমন একজন সন্ত্রাসী কিভাবে এলাকায় আসলো কারা তাকে নিয়ে আসলো তদন্ত হওয়া দরকার। স্থানীয় বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করে বলেন সন্ত্রাসী মহিন উদ্দিনের হাতে আমাদের রক্ত লেগে আছে, তাকে যারা পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে তাদেরকেও ছাড়া হবেনা। তারা মহিন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।