সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের শালা-ভাতিজার সিন্ডিকেট জিম্মি ছিলো দুই উপজেলার মানুষ!

  • রিপোটার্স নেইম
  • আপডেট এর সময় ০৬:২৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৪৬ কত জন দেখেছেন
খবরটি শেয়ার করুন

আবু ইউসুফ

সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী আর ভাতিজা আমিরুল ইসলাম, এই দুই শালা-ভাতিজাকে দিয়ে লাকাসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলায় সিন্ডিকেট তৈরি করে বিগত ১৬ বছর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিলো সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
জানা যায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডার, ঘুষ, দুর্নীতি, দখলসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতো এই শালা-ভাতিজা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট ছিলো দুই উপজেলার সাধারণ মানুষ। হামলা, মামলা, খুনের ভয়ে চুপ থাকতে হয়েছে সবাইকে। হাত পা বাঁধা চোরের মতো সহ্য করতে হয়েছে সব নির্যাতন। বিচারহীনতায় নিরবে নিভৃতে কাঁদা ছাড়া উপায় ছিলোনা সাধারণ মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী দুলা ভাই মন্ত্রীর দাপটে বিনা ভোটে উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ভাগিয়ে নিয়ে পুরো লাকসাম উপজেলাকে সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজদের আখড়ায় পরিনত করে। লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল খায়ের, উপজেলা যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম হিরার মাধ্যমে গড়ে তোলে দানবীয় এক বাহিনী। এই দানবীয় বাহিনী দিয়ে টোলের নামি পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, বাড়িঘর দখল, উন্নয়নের নামে লুটপাট, সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, পদপদবীর বাণিজ্য, শালিসের নামে ঘুষের বাণিজ্যের মাধ্যমে শত-শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে মহব্বত আলী। এই সিন্ডিকেট এতটা শক্তিশালী ছিলো চোখের সামনে অপরাধ করলেও কেউ প্রতিবাদের সাহস পেতনা, কারণ মহব্বত আলীর কথাই ছিলো এখানকার সবশেষ আইন, সে দিনকে রাত বললে রাতই বলতে হতো সবাইকে। দ্বিমত করলেই নেমে আসতো বিভীষিকাময় নির্যাতন। আর এজন্য মহব্বত আলী গড়ে তোলে আয়না ঘরের আদলে টর্চার সেল। সেখানেও বিরোধী মতের মানুষদের তুলে নিয়ে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বছরের পর বছর না হলেও লাকসামের এই আয়নাঘরে অনেক সময় কয়েক দিন আটকে রেখেও অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো বলে খবর পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর, লাকসাম থানার বিপরীত পাশে অবস্থিত কথিত সেই ‘আয়নাঘরের’ সামনে ব্যানার টানিয়েছেন নির্যাতিতরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও রিতিমত ভাইরাল হয়ে যায়। প্রতিদিনই মানুষজন কথিত সেই আয়নাঘর দেখতে সেখানে যাচ্ছে। নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত যেই আয়নাঘরে ব্যানার টানানো হয়েছে- সেই মার্কেটটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছিলেন লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী।
বহুল আলোচিত এই আয়নাঘরের মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতেন মহব্বতের নিজস্ব ক্যাডার লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল খায়ের, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি নিজাম উদ্দিন শামীম, ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ক্যাডাররা।
ভিন্ন দলের রাজনীতি করায় মনির আহমেদ নামে এক বিএনপি নেতাকে একাধিকবার ধরে আনা হয় সেখানে। চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। মনির আহমেদ বলেন আমাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আয়নাঘরের ভবনটির সম্পত্তি নিরীহ মানুষের। মহব্বত তার দুলাভাই মন্ত্রী তাজুলের প্রভাবে সেটি দখলে নিয়ে একরাতের মধ্যেই ভবন তুলতে শুরু করেন। ভবনটির তিনতলার পুরো ফ্লোর এবং ছাদে চারতলায় থাকা একটি কক্ষে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বিএনপির রাজনীতি করি বলে আমাকে একবার লাকসাম থানার এসআই বোরহান উদ্দিন ধরে নিয়ে মহব্বতের আয়নাঘরে দিয়ে আসেন। পরে তিন ঘণ্টা আমাকে একটানা নির্যাতন করে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখন বারবার মনে হচ্ছিল এখনই মনে হয় মরে যাব। সরকার পতনের পর মানুষ লাকসামের আয়নাঘর নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। এখানে নির্যাতিত মানুষরাই গত সপ্তাহে ব্যানার টানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অনেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না শর্তে লাকসাম পৌর বিএনপির অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘আমাকে তুলে নিয়ে মহব্বত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রথমে নির্মম নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে তারা আমার পায়ুপথে গরম চা ঢেলে দেয়। বারবার বৈদ্যুতিক শক দেয়।’ লাকসাম হাউজিং এলাকার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ‘মহব্বত সব কিছুই করেছেন তাজুল ইসলামের নির্দেশে। আমি হাউজিং এলাকায় বাড়ি নির্মাণের সময় চাঁদা দিতে রাজি হইনি বলে আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় মহব্বত বাহিনী। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে জীবন রক্ষা করেছি। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো ভয়ে কেঁপে উঠি আমি। আমি মনে করি, তাজুল ইসলাম ও মহব্বতদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
দৌলতগঞ্জ বাজারের হাজি মোকছেদ আলী টাওয়ারের এক ব্যবসায়ী জানান, তাজুল ইসলাম ও তার শ্যালক মহব্বত আলী এতদিন মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে। মুখে বলেছে তারা ব্যবসায়ীদের কল্যাণ চায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের বাসার চাল, ডাল, কাপড়চোপড়, তরকারি সব আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রি নিয়ে গেছে। বহু ব্যবসায়ী তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা পায়।
অন্যদিকে মনোহরগঞ্জে তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলামও বিনাভোটে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর রাতারাতি বদলে যায় দৃশ্যাপট, মন্ত্রীর কথিত উন্নয়ন সমন্বক কামাল হোসেনসহ যুবলীগ ছাত্রলীগের চিহ্নিত ক্যাডারদের নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে টেন্ডারসহ উপজেলার সব উন্নয়ন প্রকল্প, গড়ে তোলেন লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট বাহিনী। চাচার ক্ষমতার দাপটে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা হয় শত শত কোটি টাকা। নিরীহ মানুষদের উপর নেমে আসে জুলুম নির্যাতন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বাদ যায়নি নির্যাতন আর হয়রানি থেকে। আমিরুলের ছত্রছায়া আর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপলাসার বাজারে রেলওয়েসহ সরকারি জায়গা দখল করে নেয় দখলদাররা। আর বিরোধীমতের জন্য ছিলো ভয়ংকর এক জনপদ। বিরোধীমতের কোনো সক্রিয় কর্মী একরাতের জন্যেও ঘুমাতে পারেননি নিজের ঘরে, পালিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। কাউকে পেলেই তাকে বাড়িতে ধরে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হতো অনেক সময় থানার ভেতরে পুলিশের সামনেই নির্যাতন করতো আমিরুল এবং তার ক্যাডার বাহিনী।
লাকসাম মনোহরগঞ্জে সাধারণ মানুষ বলেন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তাজুল ইসলাম মানুষকে গোলামের মতো শাসন করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিলোনা। বিশেষ করে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের জন্য লাকসাম মনোহরগঞ্জ ছিলো উš§ুক্ত এক জেলাখানা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই লাকসাম থেকে পালিয়ে যান মহব্বত আলী ও আমিরুল ইসলাম। তাদের বাহিনীর সদস্যরা এখন এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।

ট্যাগঃ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

সাবেক মন্ত্রী তাজুলের শালা-ভাতিজার সিন্ডিকেট জিম্মি ছিলো দুই উপজেলার মানুষ!

আপডেট এর সময় ০৬:২৭:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
খবরটি শেয়ার করুন

আবু ইউসুফ

সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী আর ভাতিজা আমিরুল ইসলাম, এই দুই শালা-ভাতিজাকে দিয়ে লাকাসাম-মনোহরগঞ্জ উপজেলায় সিন্ডিকেট তৈরি করে বিগত ১৬ বছর সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিলো সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
জানা যায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডার, ঘুষ, দুর্নীতি, দখলসহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতো এই শালা-ভাতিজা। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট ছিলো দুই উপজেলার সাধারণ মানুষ। হামলা, মামলা, খুনের ভয়ে চুপ থাকতে হয়েছে সবাইকে। হাত পা বাঁধা চোরের মতো সহ্য করতে হয়েছে সব নির্যাতন। বিচারহীনতায় নিরবে নিভৃতে কাঁদা ছাড়া উপায় ছিলোনা সাধারণ মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় তাজুল ইসলামের শ্যালক মহব্বত আলী দুলা ভাই মন্ত্রীর দাপটে বিনা ভোটে উপজেলা পরিষদে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ভাগিয়ে নিয়ে পুরো লাকসাম উপজেলাকে সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজদের আখড়ায় পরিনত করে। লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল খায়ের, উপজেলা যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম হিরার মাধ্যমে গড়ে তোলে দানবীয় এক বাহিনী। এই দানবীয় বাহিনী দিয়ে টোলের নামি পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, বাড়িঘর দখল, উন্নয়নের নামে লুটপাট, সরকারি জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, পদপদবীর বাণিজ্য, শালিসের নামে ঘুষের বাণিজ্যের মাধ্যমে শত-শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে মহব্বত আলী। এই সিন্ডিকেট এতটা শক্তিশালী ছিলো চোখের সামনে অপরাধ করলেও কেউ প্রতিবাদের সাহস পেতনা, কারণ মহব্বত আলীর কথাই ছিলো এখানকার সবশেষ আইন, সে দিনকে রাত বললে রাতই বলতে হতো সবাইকে। দ্বিমত করলেই নেমে আসতো বিভীষিকাময় নির্যাতন। আর এজন্য মহব্বত আলী গড়ে তোলে আয়না ঘরের আদলে টর্চার সেল। সেখানেও বিরোধী মতের মানুষদের তুলে নিয়ে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বছরের পর বছর না হলেও লাকসামের এই আয়নাঘরে অনেক সময় কয়েক দিন আটকে রেখেও অমানবিক নির্যাতন চালানো হতো বলে খবর পাওয়া গেছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর, লাকসাম থানার বিপরীত পাশে অবস্থিত কথিত সেই ‘আয়নাঘরের’ সামনে ব্যানার টানিয়েছেন নির্যাতিতরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও রিতিমত ভাইরাল হয়ে যায়। প্রতিদিনই মানুষজন কথিত সেই আয়নাঘর দেখতে সেখানে যাচ্ছে। নির্যাতিতদের সঙ্গে কথা বলে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত যেই আয়নাঘরে ব্যানার টানানো হয়েছে- সেই মার্কেটটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছিলেন লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মহব্বত আলী।
বহুল আলোচিত এই আয়নাঘরের মানুষের ওপর নির্যাতন চালাতেন মহব্বতের নিজস্ব ক্যাডার লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবুল খায়ের, ইউপি চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপজেলা সভাপতি নিজাম উদ্দিন শামীম, ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের স্থানীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও ক্যাডাররা।
ভিন্ন দলের রাজনীতি করায় মনির আহমেদ নামে এক বিএনপি নেতাকে একাধিকবার ধরে আনা হয় সেখানে। চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। মনির আহমেদ বলেন আমাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আয়নাঘরের ভবনটির সম্পত্তি নিরীহ মানুষের। মহব্বত তার দুলাভাই মন্ত্রী তাজুলের প্রভাবে সেটি দখলে নিয়ে একরাতের মধ্যেই ভবন তুলতে শুরু করেন। ভবনটির তিনতলার পুরো ফ্লোর এবং ছাদে চারতলায় থাকা একটি কক্ষে চালানো হতো নির্মম নির্যাতন। বিএনপির রাজনীতি করি বলে আমাকে একবার লাকসাম থানার এসআই বোরহান উদ্দিন ধরে নিয়ে মহব্বতের আয়নাঘরে দিয়ে আসেন। পরে তিন ঘণ্টা আমাকে একটানা নির্যাতন করে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তখন বারবার মনে হচ্ছিল এখনই মনে হয় মরে যাব। সরকার পতনের পর মানুষ লাকসামের আয়নাঘর নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। এখানে নির্যাতিত মানুষরাই গত সপ্তাহে ব্যানার টানিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অনেকে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না শর্তে লাকসাম পৌর বিএনপির অন্যতম শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা বলেন, ‘আমাকে তুলে নিয়ে মহব্বত ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রথমে নির্মম নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে তারা আমার পায়ুপথে গরম চা ঢেলে দেয়। বারবার বৈদ্যুতিক শক দেয়।’ লাকসাম হাউজিং এলাকার এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ‘মহব্বত সব কিছুই করেছেন তাজুল ইসলামের নির্দেশে। আমি হাউজিং এলাকায় বাড়ি নির্মাণের সময় চাঁদা দিতে রাজি হইনি বলে আমাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায় মহব্বত বাহিনী। পরে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে জীবন রক্ষা করেছি। সেদিনের কথা মনে হলে এখনো ভয়ে কেঁপে উঠি আমি। আমি মনে করি, তাজুল ইসলাম ও মহব্বতদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার।
দৌলতগঞ্জ বাজারের হাজি মোকছেদ আলী টাওয়ারের এক ব্যবসায়ী জানান, তাজুল ইসলাম ও তার শ্যালক মহব্বত আলী এতদিন মানুষের রক্ত চুষে খেয়েছে। মুখে বলেছে তারা ব্যবসায়ীদের কল্যাণ চায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের বাসার চাল, ডাল, কাপড়চোপড়, তরকারি সব আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রি নিয়ে গেছে। বহু ব্যবসায়ী তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা পায়।
অন্যদিকে মনোহরগঞ্জে তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিরুল ইসলামও বিনাভোটে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ার পর রাতারাতি বদলে যায় দৃশ্যাপট, মন্ত্রীর কথিত উন্নয়ন সমন্বক কামাল হোসেনসহ যুবলীগ ছাত্রলীগের চিহ্নিত ক্যাডারদের নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে টেন্ডারসহ উপজেলার সব উন্নয়ন প্রকল্প, গড়ে তোলেন লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজির সিন্ডিকেট বাহিনী। চাচার ক্ষমতার দাপটে উন্নয়নের নামে লুটপাট করা হয় শত শত কোটি টাকা। নিরীহ মানুষদের উপর নেমে আসে জুলুম নির্যাতন। তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বাদ যায়নি নির্যাতন আর হয়রানি থেকে। আমিরুলের ছত্রছায়া আর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপলাসার বাজারে রেলওয়েসহ সরকারি জায়গা দখল করে নেয় দখলদাররা। আর বিরোধীমতের জন্য ছিলো ভয়ংকর এক জনপদ। বিরোধীমতের কোনো সক্রিয় কর্মী একরাতের জন্যেও ঘুমাতে পারেননি নিজের ঘরে, পালিয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। কাউকে পেলেই তাকে বাড়িতে ধরে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হতো অনেক সময় থানার ভেতরে পুলিশের সামনেই নির্যাতন করতো আমিরুল এবং তার ক্যাডার বাহিনী।
লাকসাম মনোহরগঞ্জে সাধারণ মানুষ বলেন দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে তাজুল ইসলাম মানুষকে গোলামের মতো শাসন করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিলোনা। বিশেষ করে বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের জন্য লাকসাম মনোহরগঞ্জ ছিলো উš§ুক্ত এক জেলাখানা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই লাকসাম থেকে পালিয়ে যান মহব্বত আলী ও আমিরুল ইসলাম। তাদের বাহিনীর সদস্যরা এখন এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়েছে।