মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগ্রাসী বন্যায় পানিবন্দি ৩৬ লাখ মানুষ

  • রিপোটার্স নেইম
  • আপডেট এর সময় ০৯:০৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • ১৪৬ কত জন দেখেছেন
খবরটি শেয়ার করুন

আবু ইউসুফ

৫০ উপজেলা বন্যা প্লাবিত ॥ বন্যায় চার জেলায় ৮ জনের মৃত্যু
টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ১০ জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকালের এক তথ্য বিবরণীতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বন্যায় বিকাল পর্যন্ত ১০ জেলায় এসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর মধ্যে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে- চলমান বন্যায় কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজন মাথায় গাছ পড়ে মারা গেছেন। মৃতরা হলেন- নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা শহরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪) এবং লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, বুধবার রাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি সেতুর নিচে তলিয়ে যান নাঙ্গলকোটের দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী। প্রবল স্রোতে হারিয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে কুমিল্লা নগরের এক কিশোর মারা যায়। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক যোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসী মারা যান। বুধবার সকালে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া (আদর্শ গ্রাম) পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত সোমবার বিকেলে সোহরাব হোসেন নামে এক আইনজীবী বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তিনি মারা যান। কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- রামু উপজেলার সাচিং মারমা (২৬) ও আমজাদ হোছন (২২)। এদিকে ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রামুর বাসিন্দা রোমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রামু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ঈঁদগাও উপজেলার ইসলামাবাদ, পোকখালী ও ইসলামপুর এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার। যুব রেড ক্রিসেন্টের টিম লিডার আজিজুল ইসলাম আরজু বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা রান্না করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে ত্রাণ তৎপরতা দরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম ও শুকনো খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যায় কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজারের ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সুর্বণা আক্তার বীরচন্দ্রপুর গ্রামের পারভেজ মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাত থেকে আখাউড়ায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে পুরো স্থলবন্দর এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এত বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের যাত্রী পারাপার ও আমদানি-রপ্তানির কাজ। পাহাড়ি ঢলের পানি গ্রামেও ঢুকে পড়েছে। পানি সুবর্ণাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। সুবর্ণার ভাই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে তার প্রথম সন্তানকে ঘর থেকে রাস্তায় রেখে আসতে যান। পরবর্তীতে সুবর্ণাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। তবে সুবর্ণা তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পানিতে পড়ে ডুবে যান। পরে তার ভাই ও স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন জানান, সুবর্ণাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন তিনি পাহাড়ি ঢলের পানিতে পড়ে গিয়ে ডুবে যান। তবে হাসপাতালে আনার আগেই সুবর্ণার মৃত্যু হয়। আখাউড়ায় বন্যা, বিপজ্জনক অবস্থায় হাওড়া নদীর পানি: টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদী ও জাজিরা খালে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যার। এছাড়া গত দুইদিনে সাত ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী (চ. দ.) মো. মনজুর হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে হাওড়া নদী ও জাজীর খালসহ বিভিন্ন স্থানে পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। এছাড়া কালন্দি খাল, কাটা খাল ও জাজিরা খালের পানি বাড়ায় বন্যা হয়েছে। বুধবারের (২১ আগস্ট) তুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট) হাওড়া নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি অতিক্রম করলে আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এদিকে গতকালের চেয়ে আজ সকাল থেকে বন্দরের পাশে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে বন্দরের বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার। তাছাড়া উপজেলার বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ৩৬টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এর আগে বুধবার দিনগত রাত ২টায় খলাপাড়া সড়ক ও বৃহস্পতিবার ভোরে কর্নেল বাজার থেকে ইটনা সড়কের বাঁধের অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়িত্বরত সেনাবাহিনী সদস্যদের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হোসাইন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। ইউএনও গাজালা পারভীন জানান, আখাউড়ায় ৫৪টি প্রাইমারি বিদ্যালয় ও দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মধ্যে দেওয়া হবে।
সিলেটে বিপৎসীমার ওপরে কুশিয়ারা নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা: টানা কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি থাকলেও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে ইতোমধ্যে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের দুই জেলা মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে সিলেট জেলায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটের কুশিয়ারা নদীর ৪টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে, সকাল ৯টায় সিলেটের কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জ অমলসিদ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলায় ৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। দুপুর ১২টায় একই নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সকাল ৯টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। আর দুপুর ১২টার তথ্য অনুযায়ী, শূন্য দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ও ১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে যদি বিপৎসীমা অতিক্রম করে তাহলে ১০-১২ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু আগেই এই জেলায় কয়েকবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তাই পূর্বের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সার্বক্ষণিক তদারকি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগঃ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আগ্রাসী বন্যায় পানিবন্দি ৩৬ লাখ মানুষ

আপডেট এর সময় ০৯:০৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
খবরটি শেয়ার করুন

আবু ইউসুফ

৫০ উপজেলা বন্যা প্লাবিত ॥ বন্যায় চার জেলায় ৮ জনের মৃত্যু
টানা ভারী বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ১০ জেলায় প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার বিকালের এক তথ্য বিবরণীতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বন্যায় বিকাল পর্যন্ত ১০ জেলায় এসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়। এর মধ্যে চার জেলায় আটজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে- চলমান বন্যায় কুমিল্লায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন বন্যার পানিতে তলিয়ে, একজন বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং একজন মাথায় গাছ পড়ে মারা গেছেন। মৃতরা হলেন- নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী (৪৫), কুমিল্লা শহরের ছোট এলাকার কিশোর রাফি (১৫), চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সোনাকাটিয়া গ্রামের কানু মিয়ার ছেলে শাহাদাত হোসেন (৩৪) এবং লাকসামে পানিতে তলিয়ে মারা যাওয়া শিশুর নাম-পরিচয় জানা যায়নি। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, বুধবার রাতে মাছ ধরতে গিয়ে স্থানীয় একটি সেতুর নিচে তলিয়ে যান নাঙ্গলকোটের দাউদপুর এলাকার কেরামত আলী। প্রবল স্রোতে হারিয়ে গেলে স্থানীয় লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে তার মরদেহ ভেসে ওঠে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে বৃষ্টির মধ্যে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে লেগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রাফি (১৫) নামে কুমিল্লা নগরের এক কিশোর মারা যায়। কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক যোবায়ের হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানিতে মাছ ধরার সময় গাছ পড়ে শাহাদাত হোসেন (৩৪) নামের এক প্রবাসী মারা যান। বুধবার সকালে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সোনাকাটিয়া (আদর্শ গ্রাম) পূর্বপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ত্রিনাথ সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত সোমবার বিকেলে সোহরাব হোসেন নামে এক আইনজীবী বৃষ্টির মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। কুমিল্লা নগরীর সালাউদ্দিন মোড়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেখে বের হলে বৃষ্টির পানিতে পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে তিনি মারা যান। কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কক্সবাজারে দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এসব এলাকার আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক পানিতে ডুবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া পানিতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) তাদের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- রামু উপজেলার সাচিং মারমা (২৬) ও আমজাদ হোছন (২২)। এদিকে ঈদগাঁও, চকরিয়া-পেকুয়া আর রামুতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন এসব উপজেলার শতাধিক গ্রামের মানুষ। রামু উপজেলার গর্জনিয়ার ক্যাজরবিল, ডেঙ্গারচর, পশ্চিম বোমাংখিল, জুমপাড়া, পাতালবরপাড়া, রাজঘাট, জাউচপাড়া, মরিচ্যাচার, জুমছড়ি, পূর্বজুমছড়ি, মইন্যাকাটা, পূর্ববোমাংখিল, বোমাংখিল ও মাঝিরকাটার একাংশের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রামুর বাসিন্দা রোমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রামু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে রামুর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া ঢলের পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ঈঁদগাও উপজেলার ইসলামাবাদ, পোকখালী ও ইসলামপুর এলাকার মানুষও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে গেছে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার। যুব রেড ক্রিসেন্টের টিম লিডার আজিজুল ইসলাম আরজু বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তারা রান্না করতে পারছেন না। এই মুহূর্তে ত্রাণ তৎপরতা দরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, টানা বৃষ্টিতে কক্সবাজারের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানে উদ্ধার কার্যক্রম ও শুকনো খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যায় কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজারের ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে ডুবে সুবর্ণা আক্তার নামে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরচন্দ্রপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সুর্বণা আক্তার বীরচন্দ্রপুর গ্রামের পারভেজ মিয়ার স্ত্রী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) রাত থেকে আখাউড়ায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বুধবার সকাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দরের পাশ বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে পুরো স্থলবন্দর এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়। এত বন্ধ হয়ে যায় বন্দরের যাত্রী পারাপার ও আমদানি-রপ্তানির কাজ। পাহাড়ি ঢলের পানি গ্রামেও ঢুকে পড়েছে। পানি সুবর্ণাদের ঘরে ঢুকে পড়ে। সুবর্ণার ভাই তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে তার প্রথম সন্তানকে ঘর থেকে রাস্তায় রেখে আসতে যান। পরবর্তীতে সুবর্ণাকে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল তার। তবে সুবর্ণা তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পানিতে পড়ে ডুবে যান। পরে তার ভাই ও স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন জানান, সুবর্ণাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন তিনি পাহাড়ি ঢলের পানিতে পড়ে গিয়ে ডুবে যান। তবে হাসপাতালে আনার আগেই সুবর্ণার মৃত্যু হয়। আখাউড়ায় বন্যা, বিপজ্জনক অবস্থায় হাওড়া নদীর পানি: টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার হাওড়া নদী ও জাজিরা খালে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ বন্যার। এছাড়া গত দুইদিনে সাত ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী (চ. দ.) মো. মনজুর হোসেন বলেন, এ মুহূর্তে হাওড়া নদী ও জাজীর খালসহ বিভিন্ন স্থানে পানি বিপৎসীমার ওপরে আছে। এছাড়া কালন্দি খাল, কাটা খাল ও জাজিরা খালের পানি বাড়ায় বন্যা হয়েছে। বুধবারের (২১ আগস্ট) তুলনায় আজ (বৃহস্পতিবার, ২২ আগস্ট) হাওড়া নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি অতিক্রম করলে আরও এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এদিকে গতকালের চেয়ে আজ সকাল থেকে বন্দরের পাশে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র বেগে পানি ঢুকছে। এতে বন্ধ হয়ে পড়েছে বন্দরের বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার। তাছাড়া উপজেলার বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ৩৬টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এর আগে বুধবার দিনগত রাত ২টায় খলাপাড়া সড়ক ও বৃহস্পতিবার ভোরে কর্নেল বাজার থেকে ইটনা সড়কের বাঁধের অংশ ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দায়িত্বরত সেনাবাহিনী সদস্যদের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হোসাইন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজালা পারভীন রুহি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। ইউএনও গাজালা পারভীন জানান, আখাউড়ায় ৫৪টি প্রাইমারি বিদ্যালয় ও দুইটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গতদের মধ্যে দেওয়া হবে।
সিলেটে বিপৎসীমার ওপরে কুশিয়ারা নদীর পানি, বন্যার শঙ্কা: টানা কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। সঙ্গে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি থাকলেও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে ইতোমধ্যে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আবারও বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগের দুই জেলা মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে সিলেট জেলায় এখনো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটের কুশিয়ারা নদীর ৪টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তথ্য মতে, সকাল ৯টায় সিলেটের কুশিয়ারা নদীর জকিগঞ্জ অমলসিদ পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার, বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলায় ৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, শেরপুর পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছিল। দুপুর ১২টায় একই নদীর পানি অমলসীদ পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে এক সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৭২ সেন্টিমিটার ও শেরপুরে তিন সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সকাল ৯টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১ দশমিক ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। আর দুপুর ১২টার তথ্য অনুযায়ী, শূন্য দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ও ১ দশমিক ০১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিলেট আবহাওয়া অফিস। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদীর পানি ইতোমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে যদি বিপৎসীমা অতিক্রম করে তাহলে ১০-১২ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু আগেই এই জেলায় কয়েকবার বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তাই পূর্বের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সার্বক্ষণিক তদারকি করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।