মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লাকসাম-মনোহরগঞ্জে দল গোছাচ্ছে জামায়াত

  • আবু ইউসুফ
  • আপডেট এর সময় ০৭:৫৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • ১০৩ কত জন দেখেছেন

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৩৬ জুলাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে মিথ্যা মামলা-হামলায় স্মরণকালের ভয়াবহ নির্যাতন নিপীড়ন ভুলে কল্যাণকর নতুন রাষ্ট্র গঠনে নব উদ্যোমে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কোরআনের আইনে দেশ পরিচালনায় জনমত গঠনে পাড়া মহল্লায় ছুটে যাচ্ছেন জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সেই লক্ষে প্রায় দুই যুগ পর কুমিল্লা-৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জে দল গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। বিভিন্ন স্থানে আবার চালু করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। কারাগারে ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে এলাকার বাহিরে থাকা নেতাকর্মী এলাকায় ফিরেছেন। দলের অবস্থান দৃঢ করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশের চাপে ঠিকমতো কর্মকাণ্ড চালাতে পারেননি তারা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগের সেই অবস্থা নেই। এখন অনুকূল পরিবেশে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত দেড় দশকে হামলা-মামলা-নির্যাতনের পর এখন নির্বিঘ্নে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মী।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে লাকসাম মনোহরগঞ্জের রাজপথে শক্তিশালী অবস্থান জানান দিচ্ছে দলটি। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত ৪ মাস যাবত প্রায় প্রতিদিন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করেছে জামায়াত। এছাড়া জামায়াতের পক্ষে জনমত গঠনে নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি।

জামায়াত নেতারা জানান, এখানকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা ছিল। এর মধ্যে অনেক মামলা থেকে নেতাকর্মীরা খালাস পেয়েছেন। আরও বেশ কিছু মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন ধরে যারা মামলা হামলার শিকার হয়ে এলাকায় থাকতে পারেননি, তারা সবাই এলাকায় ফিরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তারা জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন। কেউ যাতে বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়েন, সে ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। কুমিল্লা-৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ড. একেএম সারওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর কুমিল্লা-৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে জামায়াতকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে, সভা সমাবেশে জামায়াত নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে।
সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বললে, তারা বলেন পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার হাসিনা তার রাষ্ট্রীয় ও দলীয় পেটুয়া বাহিনী দিয়ে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তারা নিজেরাই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।
মিথ্যা কল্পকাহিনি সাজিয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিয়ে এখন নিজেরাই ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন আওয়ামী লীগের দমন পীড়ন সত্বেও জামায়াতের জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বেড়েছে যা আগামী নির্বাচনে মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পাবে।
লাকসাম মনোহরগঞ্জেও জামায়াতের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, ইতোমধ্যে সাধারণ ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলেছে জামায়াতের সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। বিগত দিনের ভয়াবহ বন্যায় মানুষ যখন দিশেহারা তখন জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের জীবনবাজি রেখে রাতদিন বন্যার্তদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীসহ পৌঁছে দিয়েছেন। অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিতে কাজ করেছে তাদের মেডিকেল টিম। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নগদ অর্থসহ নানা সহায়তা সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে এখানকার জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যার প্রভাব আগামী নির্বচনে পড়তে পারে।
সাধারণ ভোটাররা বলেন স্বাধীনতার পর বিভিন্ন দলকে সংসদে বসানো হলেও জামায়াত সেই সুযোগ পায়নি। এবার জামায়াতকে সরকার গঠনের মাধ্যমে সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন ভোটাররা। তারা বলেন সং ও নিষ্ঠাবান এবং আল্লাহভীরু লোকদের নেতৃত্ব দেয়া জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে ঘুম, দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন, যার মাধ্যমে  দেশ হবে একটি কল্যানকর রাষ্ট্র।

জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. একেএম সারওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, মানুষ শান্তি চায়, ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে একটি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে কোরআনের শাসনের বিকল্প নেই, তাই কোরআনের আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ দলীয় অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মী প্রতিটি মানুষের দ্বারে দ্বারে কোরআনের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছে। তিনি বলেন এখন আর আওয়ামী দুঃশাসন না থাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা নির্বিঘ্নে দলীয় সব কর্মকাণ্ড করতে পারছে। নেতাকর্মীরা দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছেন। তিনি জানান, কুমিল্লা ৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে ১৯৯১ সালের পর জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন……

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিজনেস ফোরামের সহ সেক্রেটারি এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদে জামায়াত মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হামিদুর রহমান সোহাগ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য উর্বরভূমি হচ্ছে লাকসাম মনোহরগঞ্জের মাটি। এখানকার ইসলাম প্রিয় মানুষগুলো দেশ পরিচালনায় চায় পরিবর্তন। তারা মনে করেন সৎ নিষ্ঠাবান লোকদের হাতে ক্ষমতা গেলে, তবেই দেশ এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
তিনি আরো বলেন ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনা সরকার এদেশ থেকে ইসলামকে মুছে দিতে প্রথমেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর দমন পীড়ন শুরু করে। মিথ্যা মামলা দিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয় জামায়াত নেতাদের। হাসিনা মনে করেছিলো জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিতে পারলেই জামায়াত শেষ হয়ে যাবে। অথচ জামায়াত আগের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে আরো শক্তিশালী হয়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসার দলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন  বিগত স্বৈরাচার হাসিনার দুঃশাসনে ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের সাধারণ মানুষ। লুটপাট আর দুর্নীতির কালো থাবায় পঙ্গু করে দেয়া হয়েছিলো দেশের অর্থনীতি খাতকে, ভারতীয় সংস্কৃতি ঢুকিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে করা হয়েছে কলুষিত।  এসব ক্ষত কাটিয়ে আগামী নির্বাচনে কল্যাণকর রাষ্ট্র ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জামায়াত যেন সকল মাজলুমের শেষ আশ্রস্থল হতে পারে সে লক্ষে  দল গোছানোর কাজ করছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এ ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করেছি।’

লাকাসাম পৌরসভার আমির মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন গণমানুষের দল। ইতোমধ্যে লাকসাম মনোহরগঞ্জে সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে জামায়াত। সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন কায়েম করা। বাংলাদেশকে একটি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে কায়েম করতে আমরা কাজ করে যাবো।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা নুরুন্নবী বলেন কোরআনের বিধান মতে দেশ পরিচালনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিগত ১৬ বছর আমরা প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে না পারলেও আমরা থেমে থাকিনি। শত মামলা হামলা সত্বেও আমরা আমাদের ইমানি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে গেছি, যার ফল এখন পাচ্ছি। আজ ঘরে ঘরে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে গেছে ইনশাআল্লাহ, চারদিকে এখন জামায়াতের জয়ধ্বনি। দেশ পরিবর্তনে জামায়াতের বিকল্প নেই এমন আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে রাজনীতির মাঠে। আগামী নির্বাচনে কি হবে সেটি সময়েই বলে দিবে, তবে এখানকার সাধারণ মানুষের মন জয় করতে পেরেছে জামায়াত ইসলামী আশাকরি তার সুফলও আমরা পাবো ইনশাআল্লাহ।

ট্যাগঃ

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

লাকসাম-মনোহরগঞ্জে দল গোছাচ্ছে জামায়াত

আপডেট এর সময় ০৭:৫৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৩৬ জুলাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে মিথ্যা মামলা-হামলায় স্মরণকালের ভয়াবহ নির্যাতন নিপীড়ন ভুলে কল্যাণকর নতুন রাষ্ট্র গঠনে নব উদ্যোমে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। কোরআনের আইনে দেশ পরিচালনায় জনমত গঠনে পাড়া মহল্লায় ছুটে যাচ্ছেন জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সেই লক্ষে প্রায় দুই যুগ পর কুমিল্লা-৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জে দল গোছাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। বিভিন্ন স্থানে আবার চালু করা হয়েছে দলীয় কার্যালয়। কারাগারে ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়ে এলাকার বাহিরে থাকা নেতাকর্মী এলাকায় ফিরেছেন। দলের অবস্থান দৃঢ করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে দলটি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশের চাপে ঠিকমতো কর্মকাণ্ড চালাতে পারেননি তারা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগের সেই অবস্থা নেই। এখন অনুকূল পরিবেশে দলকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত দেড় দশকে হামলা-মামলা-নির্যাতনের পর এখন নির্বিঘ্নে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পেরে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মী।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে লাকসাম মনোহরগঞ্জের রাজপথে শক্তিশালী অবস্থান জানান দিচ্ছে দলটি। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গত ৪ মাস যাবত প্রায় প্রতিদিন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ করেছে জামায়াত। এছাড়া জামায়াতের পক্ষে জনমত গঠনে নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি।

জামায়াত নেতারা জানান, এখানকার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা ছিল। এর মধ্যে অনেক মামলা থেকে নেতাকর্মীরা খালাস পেয়েছেন। আরও বেশ কিছু মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন ধরে যারা মামলা হামলার শিকার হয়ে এলাকায় থাকতে পারেননি, তারা সবাই এলাকায় ফিরে দলীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তারা জনগণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন। কেউ যাতে বিতর্কিত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়েন, সে ব্যাপারে দলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে এ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। কুমিল্লা-৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ড. একেএম সারওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
স্বৈরাচার হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর কুমিল্লা-৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে জামায়াতকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে, সভা সমাবেশে জামায়াত নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেছে।
সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বললে, তারা বলেন পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার হাসিনা তার রাষ্ট্রীয় ও দলীয় পেটুয়া বাহিনী দিয়ে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে গিয়ে তারা নিজেরাই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে।
মিথ্যা কল্পকাহিনি সাজিয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দিয়ে এখন নিজেরাই ফাঁসির মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন আওয়ামী লীগের দমন পীড়ন সত্বেও জামায়াতের জনপ্রিয়তা কয়েকগুণ বেড়েছে যা আগামী নির্বাচনে মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পাবে।
লাকসাম মনোহরগঞ্জেও জামায়াতের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, ইতোমধ্যে সাধারণ ভোটারদের মাঝে সাড়া ফেলেছে জামায়াতের সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। বিগত দিনের ভয়াবহ বন্যায় মানুষ যখন দিশেহারা তখন জামায়াত নেতাকর্মীরা তাদের জীবনবাজি রেখে রাতদিন বন্যার্তদের মাঝে প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রীসহ পৌঁছে দিয়েছেন। অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিতে কাজ করেছে তাদের মেডিকেল টিম। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নগদ অর্থসহ নানা সহায়তা সাধারণ মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে এখানকার জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা যার প্রভাব আগামী নির্বচনে পড়তে পারে।
সাধারণ ভোটাররা বলেন স্বাধীনতার পর বিভিন্ন দলকে সংসদে বসানো হলেও জামায়াত সেই সুযোগ পায়নি। এবার জামায়াতকে সরকার গঠনের মাধ্যমে সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে মনে করেন ভোটাররা। তারা বলেন সং ও নিষ্ঠাবান এবং আল্লাহভীরু লোকদের নেতৃত্ব দেয়া জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দেশে ঘুম, দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, প্রতিষ্ঠিত হবে আইনের শাসন, যার মাধ্যমে  দেশ হবে একটি কল্যানকর রাষ্ট্র।

জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ড. একেএম সারওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী বলেন, মানুষ শান্তি চায়, ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে একটি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে কোরআনের শাসনের বিকল্প নেই, তাই কোরআনের আইন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ দলীয় অঙ্গসংগঠনের সকল নেতাকর্মী প্রতিটি মানুষের দ্বারে দ্বারে কোরআনের দাওয়াত পৌছে দিচ্ছে। তিনি বলেন এখন আর আওয়ামী দুঃশাসন না থাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা নির্বিঘ্নে দলীয় সব কর্মকাণ্ড করতে পারছে। নেতাকর্মীরা দলকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছেন। তিনি জানান, কুমিল্লা ৯ লাকসাম মনোহরগঞ্জ আসনে ১৯৯১ সালের পর জামায়াত প্রার্থী দেয়নি। আগামী নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থী দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা সে লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন……

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিজনেস ফোরামের সহ সেক্রেটারি এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদে জামায়াত মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হামিদুর রহমান সোহাগ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জন্য উর্বরভূমি হচ্ছে লাকসাম মনোহরগঞ্জের মাটি। এখানকার ইসলাম প্রিয় মানুষগুলো দেশ পরিচালনায় চায় পরিবর্তন। তারা মনে করেন সৎ নিষ্ঠাবান লোকদের হাতে ক্ষমতা গেলে, তবেই দেশ এবং দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
তিনি আরো বলেন ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনা সরকার এদেশ থেকে ইসলামকে মুছে দিতে প্রথমেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপর দমন পীড়ন শুরু করে। মিথ্যা মামলা দিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হয় জামায়াত নেতাদের। হাসিনা মনে করেছিলো জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিতে পারলেই জামায়াত শেষ হয়ে যাবে। অথচ জামায়াত আগের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে আরো শক্তিশালী হয়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসার দলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন  বিগত স্বৈরাচার হাসিনার দুঃশাসনে ক্ষত এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশের সাধারণ মানুষ। লুটপাট আর দুর্নীতির কালো থাবায় পঙ্গু করে দেয়া হয়েছিলো দেশের অর্থনীতি খাতকে, ভারতীয় সংস্কৃতি ঢুকিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে করা হয়েছে কলুষিত।  এসব ক্ষত কাটিয়ে আগামী নির্বাচনে কল্যাণকর রাষ্ট্র ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ গঠনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জামায়াত যেন সকল মাজলুমের শেষ আশ্রস্থল হতে পারে সে লক্ষে  দল গোছানোর কাজ করছি। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এ ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করেছি।’

লাকাসাম পৌরসভার আমির মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এখন গণমানুষের দল। ইতোমধ্যে লাকসাম মনোহরগঞ্জে সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে জামায়াত। সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে আমাদের প্রতিটি নেতাকর্মী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন কায়েম করা। বাংলাদেশকে একটি ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে কায়েম করতে আমরা কাজ করে যাবো।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা নুরুন্নবী বলেন কোরআনের বিধান মতে দেশ পরিচালনায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিগত ১৬ বছর আমরা প্রকাশ্যে সভা সমাবেশ করতে না পারলেও আমরা থেমে থাকিনি। শত মামলা হামলা সত্বেও আমরা আমাদের ইমানি দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে গেছি, যার ফল এখন পাচ্ছি। আজ ঘরে ঘরে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছে গেছে ইনশাআল্লাহ, চারদিকে এখন জামায়াতের জয়ধ্বনি। দেশ পরিবর্তনে জামায়াতের বিকল্প নেই এমন আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে রাজনীতির মাঠে। আগামী নির্বাচনে কি হবে সেটি সময়েই বলে দিবে, তবে এখানকার সাধারণ মানুষের মন জয় করতে পেরেছে জামায়াত ইসলামী আশাকরি তার সুফলও আমরা পাবো ইনশাআল্লাহ।